? সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ সহজেই হাতের মধ্যে কলম এবং অন্য বস্তু ধরে রাখতে পারে।
✅ দৌড়ানো এবং লাফানোতে পটু হয়ে ওঠে।
✅ এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে লাফাতে পারে।
✅ মানুষের সাথে সাধারণ আলাপচারিতা চালিয়ে যেতে পারে।
✅ অতীতের কথা স্মরণ করতে পারে।
✅ ঘরের সাধারণ কাজগুলো করতে পারে।
✅ সহজেই অন্য বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারে।
? উচ্চতাঃ ১০৩.৯-১০৫.৩ সে.মি
? ওজনঃ ১৬.৮-১৭.২ কেজি
মূল পরিবর্তনঃ
এই বয়সে আপনার সন্তানের ওজন ১৫ কেজির উপর এবং উচ্চতা ১০১ সে.মি এর কাছাকাছি থাকে। এর কম বেশি হলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, আস্তে আস্তে এটি স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে সন্তানের ওজন যদি অতিরিক্ত কম বা বেশি হয় তাহলে অবশ্যই তাকে বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এ সময় তার ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। রাতে যেন অন্তত ৯ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ঘুমায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এখন সে মোটামুটি বড়দের মতো কথাবার্তা চালিয়ে যেতে পারে। তাকে যদি আপনি কোন প্রশ্ন করেন তাহলে সে সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান ডিগবাজি দিতে সক্ষম। সে তার এক হাতের মধ্যে পেন্সিল ধরার সময় অন্য কোন ছোট বস্তুও ধরে রাখতে পারে।সিঁড়ি দিয়ে একা ওঠানামার ক্ষেত্রে তার কোনো অসুবিধা হয় না। এছাড়াও সে একাই তার জামা কাপড় পড়তে পারে এবং ব্রাশ করতে শিখে। এছাড়াও সে চামচ এবং কাঁটা চামচের ব্যবহার শিখে। সাইকেলে প্যাডেল চেপে সাইকেল চালাতে পারে। সে এখন মানুষের অবয়ব আঁকতে পারে। সামনে-পিছনে হাঁটতে পারে এবং এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে লাফাতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি আপনার সন্তান হাঁটাচলা এবং অন্যান্য কাজকর্ম সহজে করতে না পারে।
? ছোট ছোট জিনিস গুলো যদি সে হাত দিয়ে ধরতে না পারে।
? যদি সে দশটির বেশি ব্লক সাজাতে না পারে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন ঘরের অনেক কাজেই সাহায্য করতে পারে। তার খেলনা গোছানো, কাপড় ভাজ করা, নিজের ঘর গুছিয়ে রাখা সহ সহজ কাজগুলো সে করতে পারে। যেকোনো কিছুর প্রতি তার মনোযোগ অনেক বৃদ্ধি পায়।্তাই নতুন কিছু শেখানোর জন্য এটি উপযুক্ত বয়স। আগে-পরে, সকাল-বিকাল ইত্যাদি সময়ের কাজগুলো নির্দিষ্ট সময়ে করতে পারে। নিত্যদিনের রুটিন মেনে চলে।সময় সম্বন্ধে ধারণা লাভ করে এবং অতীতের কথা মনে করে বলতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার দেওয়ার নির্দেশনা গুলো বুঝতে যদি তার অসুবিধা হয়।
? তার শব্দভাণ্ডার যদি সীমিত থাকে এবং সে মুখে বলে কথাগুলো বুঝাতে না পারে।
? রং এবং আকৃতি চিনতে যদি তার কোন সমস্যা হয়।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
এসময় সন্তানকে সামলানো আপনার জন্য বেশ সহজ হয়ে যায়। কারন সে আপনার দেওয়া নিয়মকানুন মেনে চলতে পারে।এই বয়সে শিশুরা নিয়মানুবর্তিতা শিখে এবং নিয়ম মতো তার প্রতিদিনের কাজ করে থাকে। অন্য বাচ্চাদের সাথে সে নিয়ম মেনে খেলাধুলা করে। কোন কারণে যদি সে রাগ করে কিংবা জিদ করে তাহলে হাত-পা ছোড়াছুড়ি না করে ভাষায় প্রকাশ করে। এই বয়সে সে অনেক বেশি স্বাবলম্বী হয়ে যায় এবং নিজের কাজ নিজেই করতে পছন্দ করে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার সন্তান যদি অন্য বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে না চায় কিংবা অন্য বাচ্চাদের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ করে।
? আপনার থেকে দূরে যাওয়ার সময় যদি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়।
? অন্যদের কথায় যদি সে রেসপন্স না করে।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার সন্তান এখন ছড়া গান গাওয়া সহ নানারকম গান স্পষ্ট ভাবে গাইতে পারে। সে নানা রকম গল্প বলতে থাকে যার কিছু কিছু সত্য আবার কিছুটা তার কল্পনা থেকে সাজানো থাকে। সে পাঁচটির বেশি শব্দ যুক্ত বাক্য ব্যবহার করতে শিখে। সে নিজে নিজে তার স্মৃতি থেকে কবিতা মনে করে পড়তে থাকে। নিজের নামের প্রথম এবং শেষ অংশসহ সম্পূর্ণ নাম বলতে পারে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
চার বছরের শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।এই বয়সে শিশুর খাদ্যে ১৬০০ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।
সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।
দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।
বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।
রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।
দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
৫৩ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১৬১১ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ :৫৯০-৬২০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৯ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি:২০০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ১৪২ গ্রাম/দিন।
পানি: ৯৫০মিলি/দিন।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
সন্তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পাশাপাশি সন্তানকে সতর্কতার শিক্ষা দেওয়াও প্রয়োজনীয়। রাস্তা পার হওয়া কিংবা পার্কিং এরিয়াতে বাবা মায়ের হাত ধরে থাকা, চুলার কাছে না যাওয়া, চাকু কিংবা কাঁচি দিয়ে নিজে নিজে কোন কিছু না কাটা ইত্যাদি বিষয়গুলো সাবধানতার ব্যাপারে সন্তানকে শিক্ষা দিতে হবে। বাহিরে নিয়ে গেলে তার প্রতি সব সময় বিশেষ নজর রাখুন যেন সে কোন গর্ত কিংবা ডোবা/পুকুর ইত্যাদি পানি জাতীয় জায়গায় না যায় এবং এগুলো থেকে সতর্ক থাকুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সন্তানকে সেসব জায়গায় নিয়ে যান যেখানে গিয়ে সে তার নতুন নতুন দক্ষতাগুলো কাজে লাগাতে পারবে, লাফানো কিংবা মই বেয়ে ওঠা কিংবা স্লাইড দিয়ে নিচে নামা এই ধরনের কাজ গুলি করতে পারবে। আপনার সন্তানকে অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে উৎসাহিত করুন এবং তাদের ভালো বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রশংসা করে তাকে শিখতে সাহায্য করুন। আপনার সন্তান এখনও তার বদমেজাজ প্রদর্শন করতে পারে। তাই তাকে ডিসিপ্লিন শেখানোর সময় এই বিষয়গুলো মনে করিয়ে দিন। সে প্যাডেল চেপে সাইকেল চালানো শিখে তাই তাকে রাস্তায় চলার নিয়মগুলি শেখান। আপনার সন্তানকে স্ক্রিন টাইম এর ব্যাপারে নির্দেশনা দিন। সারাদিনে এক ঘণ্টার বেশি তাকে কখনোই মোবাইল কিংবা টেলিভিশন দেখতে দেওয়া উচিত নয়। তার সঠিক ঘুমের সময় নি র্ধারণ করুন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে সারাদিনে সব মিলিয়ে তার ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। ড্রয়িং, কাটিং, ক্রাফটিং ইত্যাদি বিষয়গুলো সন্তানের ছোট ছোট মাংসপেশি মজবুত করণ এবং তার দক্ষতা বৃদ্ধি করনের জন্য খুবই উপকারী। আপনার সন্তানকে ঘরের কাজের প্রতি উৎসাহিত করুন। তাকে ছোট ছোট কাজে সংযুক্ত করুন যেমন কাপড় ভাঁজ করা কিংবা ময়লা কাপড় গুলো ধোয়ার জন্য এনে দেওয়া, জুতার বক্সের মধ্যে জুতা গুলো সাজিয়ে রাখা ইত্যাদি।