সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ Kids jungle gym playground এ খেলাধুলা করতে পারে।
✅ এক পায়ের উপরে কমপক্ষে ৪-১০ সেকেন্ড সময় ধরে দাঁড়াতে পারে।
✅ এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে লাফাতে পারে।
✅ ৫-১০ টি বস্তু গুনতে পারে।
✅ আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে।
? উচ্চতাঃ ১০৪.৫-১০৫.৯ সে.মি
? ওজনঃ ১৬.৯-১৭.৩ কেজি
মূল পরিবর্তনঃ
এই বয়সে শিশুদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। তারা নতুন নতুন অক্ষর চিনতে শিখে এবং পেন্সিল দিয়ে সেগুলি খাতায় লিখে আয়ত্ত করে। ইংরেজি বড় হাতের এবং ছোট হাতের অক্ষর গুলো মোটামুটি পড়তে ও লিখতে পারে। বাংলা স্বরবর্ণগুলো লেখার চেষ্টা করে। এছাড়াও গণিতের সংখ্যাগুলো লেখা তার কাছে কিছুটা সহজ হয়ে থাকে। সে তার গল্পের বইয়ের কিছু কিছু লাইন মুখস্ত করে ফেলে। এছাড়াও তার বাসার ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার মুখস্থ করতে পারে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
শিশুরা এখন তার পায়ের উপরে অধিক ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারে। পায়ের অগ্রভাগে ভর দিয়ে হাঁটার পরিবর্তে সে গোড়ালির উপরে বেশি চাপ প্রয়োগ করে হাঁটে । সে আরো তৎপরতার সাথে দৌড়ায় এমনকি এক পায়ের ওপরে দাঁড়িয়েও দৌড়াতে পারে। সে তার পা দিয়ে বলে লাথি দেয়। জঙ্গল জিমে বড়দের তত্ত্বাবধানে খেলাধুলা করতে পারে। তার এক পায়ের উপরে ৫-১০ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।এছাড়াও সে একাই তার জামা কাপড় পড়তে পারে এবং ব্রাশ করতে শিখে। চামচ এবং কাঁটা চামচের ব্যবহার জানে। সাইকেলে প্যাডেল চেপে সাইকেল চালাতে পারে। কাঁচি দিয়ে কোন কিছু কাটা কিংবা পুতির/ফুলের মালা গাঁথা ইত্যাদি কাজে সে দক্ষ হয়ে ওঠে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি আপনার সন্তান পেন্সিল কিংবা ছোট কোন বস্তু ধরতে অসুবিধা বোধ করে।
? বল ছুড়ে মারা এবং ক্যাচ ধরার কাজটি যদি তার কাছে কঠিন মনে হয়।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
এই বয়সে শিশুরা অন্তত চার থেকে পাঁচটি রং চিনতে শিখে। কিছু কিছু বর্ণমালা লিখতে পারে এবং অন্তত তিন থেকে চারটি আকৃতি আঁকতে পারে। সে তার নিজের নামও লিখতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার শিশু যদি বেসিক র়ং চিনতে না পারে। বিশেষ করে সবুজ এবং নীল রং এর মধ্যে পার্থক্য করতে যদি তার অসুবিধা হয়।
? আপনার দেওয়ার নির্দেশনা গুলো বুঝতে যদি তার অসুবিধা হয়।
? তার শব্দভাণ্ডার যদি সীমিত থাকে এবং সে মুখে বলে কথাগুলো বুঝাতে না পারে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন তার খেলনা গুলো ভাগাভাগি করতে শিখে। সে গ্রুপে খেলাধুলা করতে পছন্দ করে এবং গ্রুপ রুলস মেনে চলে। খেলার মধ্যে একের পরে অন্যের পালা করে খেলার বিষয়টিও তার বোধগম্য হয়। তবে সে এখনো কোন না কোন কারণে সহজেই হতাশ হয়ে যায় এবং রাগ প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে হাত-পা ছোড়াছুড়ি না করে সে ভাষায় প্রকাশ করতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? সে যদি তার সমবয়সীদের সাথে মিশতে না পারে এবং তার সাথে কেউ খেলাধুলা করতে চাইলে সে রাগ হয়ে যায়।
? সে যদি অতিরিক্ত লাজুক কিংবা আগ্রাসী আচরণ করে।
? বাবা মা থেকে দূরে থাকার কারণে তার মধ্যে অতিরিক্ত উদ্বেগ প্রকাশ করে।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার ছোট্ট সন্তান এখন তার বই এর থেকে লাইন মনে করে বলতে পারে। ইংরেজি ছোট হাতের অক্ষর চিনতে শিখে। তার ছড়া গানের মধ্যে দেখা শব্দগুলোর নাম অন্যকোথাও দেখলে সে চিনতে পারে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
চার বছরের শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।এই বয়সে শিশুর খাদ্যে ১৬০০ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।
সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।
দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।
বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।
রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।
দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
৫৪ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১৬১৫ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ :৫৯০-৬২০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৯ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি:২০০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ১৪২ গ্রাম/দিন।
পানি: ৯৫০মিলি/দিন।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
সন্তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পাশাপাশি সন্তানকে সতর্কতার শিক্ষা দেওয়াও প্রয়োজনীয়। রাস্তা পার হওয়া কিংবা পার্কিং এরিয়াতে বাবা মায়ের হাত ধরে থাকা, চুলার কাছে না যাওয়া, চাকু কিংবা কাঁচি দিয়ে নিজে নিজে কোন কিছু না কাটা ইত্যাদি বিষয়গুলো সাবধানতার ব্যাপারে সন্তানকে শিক্ষা দিতে হবে। বাহিরে নিয়ে গেলে তার প্রতি সব সময় বিশেষ নজর রাখুন যেন সে কোন গর্ত কিংবা ডোবা/পুকুর ইত্যাদি পানি জাতীয় জায়গায় না যায় এবং এগুলো থেকে সতর্ক থাকুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সন্তানকে সেসব জায়গায় নিয়ে যান যেখানে গিয়ে সে তার নতুন নতুন দক্ষতাগুলো কাজে লাগাতে পারবে, লাফানো কিংবা মই বেয়ে ওঠা কিংবা স্লাইড দিয়ে নিচে নামা এই ধরনের কাজ গুলি করতে পারবে। আপনার সন্তানকে অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে উৎসাহিত করুন এবং তাদের ভালো বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রশংসা করে তাকে শিখতে সাহায্য করুন। আপনার সন্তান এখনও তার বদমেজাজ প্রদর্শন করতে পারে। তাই তাকে ডিসিপ্লিন শেখানোর সময় এই বিষয়গুলো মনে করিয়ে দিন। সে প্যাডেল চেপে সাইকেল চালানো শিখে তাই তাকে রাস্তায় চলার নিয়মগুলি শেখান। আপনার সন্তানকে স্ক্রিন টাইম এর ব্যাপারে নির্দেশনা দিন। সারাদিনে এক ঘণ্টার বেশি তাকে কখনোই মোবাইল কিংবা টেলিভিশন দেখতে দেওয়া উচিত নয়। তার সঠিক ঘুমের সময় নির্ধারণ করুন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে সারাদিনে সব মিলিয়ে তার ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। ড্রয়িং, কাটিং, ক্রাফটিং ইত্যাদি বিষয়গুলো সন্তানের ছোট ছোট মাংসপেশি মজবুত করণ এবং তার দক্ষতা বৃদ্ধি করনের জন্য খুবই উপকারী। আপনার সন্তানকে ঘরের কাজের প্রতি উৎসাহিত করুন। তাকে ছোট ছোট কাজে সংযুক্ত করুন যেমন কাপড় ভাঁজ করা কিংবা ময়লা কাপড় গুলো ধোয়ার জন্য এনে দেওয়া, জুতার বক্সের মধ্যে জুতা গুলো সাজিয়ে রাখা ইত্যাদি।