সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ লেখার সময় তিন আংগুলের মধ্যে পেন্সিল ধরে।
✅ বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ পায়।
✅ এক পায়ের উপরে লাফিয়ে সোজা পথ ধরে চলতে পারে।
✅ সম্পূর্ণ এবং বোধগম্য বাক্য ব্যবহার করে।
? উচ্চতাঃ ১০৫.৬-১০৭.০ সে.মি
? ওজনঃ ১৭.৩-১৭.৭ কেজি
মূল পরিবর্তনঃ
এই বয়সের শিশুরা তার নিজস্ব বিশ্বাসের একটি আলাদা ভুবন তৈরি করে এবং সেখানে বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করতে পছন্দ করে। তার কাল্পনিক ভুবন থেকে সে বিভিন্ন গল্প তৈরি করে এবং সেগুলো আপনাকে শোনাতে খুব ভালোবাসে। বাস্তবে সে তার নিত্যদিনের রুটিন অনুসরণ করে চলে। আপনার দেওয়া সকল জটিল নির্দেশনাগুলো সে বুঝে অনুসরণ করতে পারে। তার শারীরিক গঠনেও অনেক বেশি পরিপূর্ণতা আসতে শুরু করে। দৌড়ানোর সময় সে তার দুই হাত দোলাতে থাকে, এতে করে সে আরও দ্রুত দৌড়াতে পারে এবং তার শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন ১২ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার উঁচু থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামতে পারে এবং এই সময় সে দুই পায়ের ওপর একসাথে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারে। সে তার এক পায়ের উপরে ৯ থেকে ১০ সেকেন্ড সময় যাবত দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। সে পেছনের দিকে কয়েক পা হাটতে পারে। অন্তত দশটি ব্লক সাজাতে পারে এবং ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তু হাতের মধ্যে নিতে পারে। কোন কিছু বেয়ে উঠার সময় সে একটি পা ফেলার পরবর্তী স্টেপে অপর পা ফেলে। অর্থাৎ বিপরীতভাবে দুই পায়ের ব্যবহার করে এগিয়ে যায়। প্লেগ্রাউন্ড এর বিভিন্ন খেলনা দিয়ে খেলতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি আপনার সন্তান কয়েক সেকেন্ডের জন্যও এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে না পারে।
\? সে যদি পেন্সিল কিংবা রং পেন্সিল ধরতে পারদর্শী না হয়।
? সে যদি নিজে তার জামা খুলতে না পারে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন সহজেই ২০ কিংবা তার অধিক পর্যন্ত গুনতে পারে। বিভিন্ন জটিল ঘটনাগুলো কেন এবং কিভাবে ঘটে এই সম্পর্কিত প্রশ্ন করতে থাকে। সে সঠিকভাবে কোন গান কিংবা ছড়া মুখস্ত বলতে পারে। অনেকগুলি বস্তুর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে ছোট বস্তু চিহ্নিত করতে পারে। এছাড়াও সে তার প্রতিদিনের রুটিন মতো সহজেই কাজ করতে পারে যেমন সকালে ঘুম থেকে ওঠা, ব্রাশ করে ব্রেকফাস্ট করা, দুপুরে গোসল তারপর খাওয়া, এইভাবে নিয়মমাফিক চলার ক্ষেত্রে অভ্যস্থ হয়ে যায়। সে দুই থেকে তিনটি কমপ্লেক্স কমান্ড অনুসরণ করতে শিখে। এছাড়াও বিস্তারিতভাবে গল্প বলার ক্ষেত্রে পটু হয়ে ওঠে। অনেক সময় নিজের মত বানিয়ে বানিয়ে অনেক গল্প করে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি আপনার সন্তান কোন বর্ণ, সংখ্যা কিংবা শব্দ চিনতে না পারে।
? সে যদি দুই থেকে তিনটি নির্দেশনা যুক্ত বাক্য অনুসরণ করতে না পারে।
? অন্তত পাঁচ পর্যন্ত গুনতে না পারে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন অন্যান্যদের সাথে খেলাধুলা করতে পছন্দ করে এবং তার সমবয়সীদেরকে খুশি করার জন্য সচেষ্ট থাকে। তবে তার মধ্যে যেকোনো খেলার সময় লিডার হওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। সে চায় যেন অন্যান্যরাও তাকে ফলো করে। এই বয়সে তার মধ্যে গর্ববোধ এবং ফলাও করে কোন কিছু প্রকাশ করার প্রবণতা দেখা যায়। তাই কোন কিছুতে যদি তাকে সো-অফ করতে দেখা যায় তাহলে তাতে বিস্মিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সে তার নিজস্ব জগতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে খেলা করে। সব কাজ নিজে করতে চায় এবং মন মত না হলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? সে যদি তার সমবয়সীদের সাথে মিশতে না পারে এবং তার সাথে কেউ খেলাধুলা করতে চাইলে সে রাগ হয়ে যায়।
? সে যদি অতিরিক্ত লাজুক কিংবা আগ্রাসী আচরণ করে।
? বাবা মা থেকে দূরে থাকার কারণে তার মধ্যে অতিরিক্ত উদ্বেগ প্রকাশ পায়।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার সন্তান এখন তার নিজের নাম লিখতে পারে। সে বাসার ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার বলতে পারে। বই এর থেকে লাইন মনে করে বলতে পারে। ইংরেজি ছোট হাতের অক্ষর চিনতে শিখে। তার ছড়া গানের মধ্যে দেখা শব্দগুলোর নাম অন্যকোথাও দেখলে সে চিনতে পারে। সে স্পষ্টভাবে এবং অত্যন্ত বুদ্ধির সাথে কথা বলতে পারে। ‘এবং’, ‘ও’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে সংযুক্ত বাক্য বলতে শিখে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
চার বছরের শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।এই বয়সে শিশুর খাদ্যে ১৬০০ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।
সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।
দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।
বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।
রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।
দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
৫৬ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১৬৩১ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ :৫৯০-৬২০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৯ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি:২০০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ১৪২ গ্রাম/দিন।
পানি: ৯৫০মিলি/দিন।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
সন্তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পাশাপাশি সন্তানকে সতর্কতার শিক্ষা দেওয়াও প্রয়োজনীয়।ভাল এবং খারাপ স্পর্শ সম্পর্কে তাকে ধারনা দিন। স্কুল এ বন্ধুদের সাথে বিপদজনক কিছু করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। মোবাইল ফোনে অপ্রীতিকর কিছু দেখছে কিনা অথবা বয়স অনুপযোগী কোন কনটেন্ট বা গেম খেলছে কিনা সেদিকে লক্ষ করুন। রাস্তা পার হওয়া কিংবা পার্কিং এরিয়াতে বাবা মায়ের হাত ধরে থাকা, চুলার কাছে না যাওয়া, চাকু কিংবা কাঁচি দিয়ে নিজে নিজে কোন কিছু না কাটা ইত্যাদি বিষয়গুলো সাবধানতার ব্যাপারে সন্তানকে শিক্ষা দিতে হবে। বাহিরে নিয়ে গেলে তার প্রতি সব সময় বিশেষ নজর রাখুন যেন সে কোন গর্ত কিংবা ডোবা/পুকুর ইত্যাদি পানি জাতীয় জায়গায় না যায় এবং এগুলো থেকে সতর্ক থাকুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সন্তানকে সেসব জায়গায় নিয়ে যান যেখানে গিয়ে সে তার নতুন নতুন দক্ষতাগুলো কাজে লাগাতে পারবে, লাফানো কিংবা মই বেয়ে ওঠা কিংবা স্লাইড দিয়ে নিচে নামা এই ধরনের কাজ গুলি করতে পারবে। আপনার সন্তানকে অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে উৎসাহিত করুন এবং তাদের ভালো বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রশংসা করে তাকে শিখতে সাহায্য করুন। আপনার সন্তান এখনও তার বদমেজাজ প্রদর্শন করতে পারে। তাই তাকে ডিসিপ্লিন শেখানোর সময় এই বিষয়গুলো মনে করিয়ে দিন। সে প্যাডেল চেপে সাইকেল চালানো শিখে তাই তাকে রাস্তায় চলার নিয়মগুলি শেখান। আপনার সন্তানকে স্ক্রিন টাইম এর ব্যাপারে নির্দেশনা দিন। সারাদিনে এক ঘণ্টার বেশি তাকে কখনোই মোবাইল কিংবা টেলিভিশন দেখতে দেওয়া উচিত নয়। তার সঠিক ঘুমের সময় নির্ধারণ করুন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে সারাদিনে সব মিলিয়ে তার ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। ড্রয়িং, কাটিং, ক্রাফটিং ইত্যাদি বিষয়গুলো সন্তানের ছোট ছোট মাংসপেশি মজবুত করণ এবং তার দক্ষতা বৃদ্ধি করনের জন্য খুবই উপকারী। আপনার সন্তানকে ঘরের কাজের প্রতি উৎসাহিত করুন। তাকে ছোট ছোট কাজে সংযুক্ত করুন যেমন কাপড় ভাঁজ করা কিংবা ময়লা কাপড় গুলো ধোয়ার জন্য এনে দেওয়া, জুতার বক্সের মধ্যে জুতা গুলো সাজিয়ে রাখা ইত্যাদি।