সাধারন বিষয় গুলোঃ
- স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পারে।
- বন্ধুদের সাথে খেলনা শেয়ার করে।
- সোজা পথ ধরে হেঁটে যেতে পারে এবং এক পায়ের উপরে লাফাতে পারে।
- সকল বর্ণমালা পড়তে পারে।
- ১ থেকে ২০ বা তার বেশি পর্যন্ত গুনতে পারে।
- প্রতিদিনের কাজগুলি নিজেই করে থাকে।
উচ্চতাঃ ১০৬.২-১০৭.৫ সে.মি
ওজনঃ ১৭.৫-১৭.৮ কেজি
মূল পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান পাঁচ বছরের কাছাকাছি চলে এসেছে। এখন সে বর্ণমালা পড়তে এবং লিখতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে দুই অক্ষরের শব্দ পড়তে পারে। সে কিছু সংখ্যা লিখতে পারে। এই বয়সে সে অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হয়, অন্যের খুশিতে আনন্দিত হয়। তার মধ্যে মিথ্যা বলার প্রবণতা দেখা দেয় কেননা সে ভয় পায় যদি সত্য বলার কারণে তাকে শাস্তি পেতে হয়!!
দৈহিক পরিবর্তনঃ
এই বয়সে আপনার সন্তান বিভিন্ন বাধা পেরিয়ে তার খেলনায় চড়ে চারিদিকে ঘুরতে পারে। যেমন সাইকেলে প্যাডেল দিয়ে কিংবা স্কুটারে পা দিয়ে ঠেলে রাস্তায় চালাতে পারে। এছাড়া সে সোজা লাইন ধরে হাঁটতে পারে এবং তার এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে লাফাতে পারে। বৃত্তাকার পথে দৌড়ানো কিংবা দূরত্ব অনুযায়ী মাথা দিয়ে বল ছুড়ে মারা এবং লক্ষ্যে পৌঁছানোর কাজটি করতে সক্ষম হয়। বিভিন্ন রং করার বইগুলিতে ছবিতে দেখানো রং অনুযায়ী সে নিজে নিজে রং করতে পারে। দৌড়ানোর সময় তার হাত উঁচু করে দৌড়ায় যেন ব্যালেন্স রাখতে পারে। ১২ থেকে ১৫ সেন্টি মিটার উঁচু থেকে লাফ দিতে পারে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- যদি আপনার সন্তান এক পায়ের উপর দাঁড়াতে না পারে।
- যদি সে সোজা পথে হাঁটতে না পারে।
- পেন্সিল ধরতে অক্ষম হয় এবং নির্দিষ্ট আকৃতি আঁকতে না পারে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
তার সন্তান এই বয়সে একই ধরনের শব্দ চিহ্নিত করতে পারে। ২০টি বা তার অধিক বস্তু গণনা করতে পারে। সে এখন সবচাইতে বড়, লম্বা, সবচাইতে ছোট, একই, ভিন্ন, অনেক, অল্প ইত্যাদি পরিমাপ সম্বন্ধে ধারণা রাখে। কোন গ্রুপ ছবিতে সকলকে নাম ধরে ধরে চিনতে পারে এবং কেউ অনুপস্থিত থাকলে সেটিও চিহ্নিত করতে পারে। দুই কিংবা তিন বাক্যের নির্দেশনা অনুসরণ করে চলে। নিজে নিজে গল্প বানিয়ে শোনাতে পারে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- যদি আপনার সন্তান দশ পর্যন্ত গণনা করতে না পারে।
- যদি সে দুই বা তিনটি বাক্যের নির্দেশনা অনুসরণ করতে না পারে।
- কথা বলার সময় যদি পূর্ণ বাক্য না বলে এবং ছোট ছোট শব্দ ব্যবহার করে কথা বলে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
এই বয়সে আপনার সন্তান গ্রুপের সদস্য হয়ে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে পছন্দ করে। গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের সাথে সে বন্ধুসুলভ আচরণ করে এবং খেলার সময় অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত থাকে। কোন কাজে সে বড়দের অনুমতি নিতে চায়। তারমধ্যে গর্ববোধ এবং আত্ম অহংকার জাগ্রত হতে পারে। সে কিছুটা আত্মশোষিত আচরণ করে এবং অন্য বাচ্চাদের সাথেও ঝাঁঝালো আচরণ করতে পারে। সে তার আশেপাশে সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে এবং শারীরিক আগ্রাসনের চাইতে মৌখিকভাবে সবকিছু কন্ট্রোল করতে চায়।
চিন্তার বিষয়ঃ
- যদি আপনার সন্তান খুব সাধারণ ভাষায় নিজেকে ব্যক্ত করতে না পারে।
- অন্য বাচ্চাদের সাথে মেলামেশা করতে না পারে।
- যদি সে তার আশপাশের মানুষদের সাথে কোন কারনে চরম লড়াইয়ের সাথে ভুল আচরণ প্রদর্শন করে।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার সোনামণি এখন কি, কেন, কিভাবে, কখন এই জাতীয় প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে। সে বিভিন্ন প্রিপজিশন যেমন উপর, নিচে, আগে, পরে ইত্যাদি ব্যবহার করে কথা বলে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
চার বছরের শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।এই বয়সে শিশুর খাদ্যে ১৬০০ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।
সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।
দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।
বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।
রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।
দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
৫৭ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১৬৩৬ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ :৫৯০-৬২০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৯ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি:২০০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ১৪২ গ্রাম/দিন।
পানি: ৯৫০মিলি/দিন।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
সন্তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পাশাপাশি সন্তানকে সতর্কতার শিক্ষা দেওয়াও প্রয়োজনীয়।ভাল এবং খারাপ স্পর্শ সম্পর্কে তাকে ধারনা দিন। স্কুল এ বন্ধুদের সাথে বিপদজনক কিছু করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। মোবাইল ফোনে অপ্রীতিকর কিছু দেখছে কিনা অথবা বয়স অনুপযোগী কোন কনটেন্ট বা গেম খেলছে কিনা সেদিকে লক্ষ করুন। রাস্তা পার হওয়া কিংবা পার্কিং এরিয়াতে বাবা মায়ের হাত ধরে থাকা, চুলার কাছে না যাওয়া, চাকু কিংবা কাঁচি দিয়ে নিজে নিজে কোন কিছু না কাটা ইত্যাদি বিষয়গুলো সাবধানতার ব্যাপারে সন্তানকে শিক্ষা দিতে হবে। বাহিরে নিয়ে গেলে তার প্রতি সব সময় বিশেষ নজর রাখুন যেন সে কোন গর্ত কিংবা ডোবা/পুকুর ইত্যাদি পানি জাতীয় জায়গায় না যায় এবং এগুলো থেকে সতর্ক থাকুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সন্তানকে সেসব জায়গায় নিয়ে যান যেখানে গিয়ে সে তার নতুন নতুন দক্ষতাগুলো কাজে লাগাতে পারবে, লাফানো কিংবা মই বেয়ে ওঠা কিংবা স্লাইড দিয়ে নিচে নামা এই ধরনের কাজ গুলি করতে পারবে। আপনার সন্তানকে অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে উৎসাহিত করুন এবং তাদের ভালো বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রশংসা করে তাকে শিখতে সাহায্য করুন। আপনার সন্তান এখনও তার বদমেজাজ প্রদর্শন করতে পারে। তাই তাকে ডিসিপ্লিন শেখানোর সময় এই বিষয়গুলো মনে করিয়ে দিন। সে প্যাডেল চেপে সাইকেল চালানো শিখে তাই তাকে রাস্তায় চলার নিয়মগুলি শেখান। আপনার সন্তানকে স্ক্রিন টাইম এর ব্যাপারে নির্দেশনা দিন। সারাদিনে এক ঘণ্টার বেশি তাকে কখনোই মোবাইল কিংবা টেলিভিশন দেখতে দেওয়া উচিত নয়। তার সঠিক ঘুমের সময় নির্ধারণ করুন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে সারাদিনে সব মিলিয়ে তার ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। ড্রয়িং, কাটিং, ক্রাফটিং ইত্যাদি বিষয়গুলো সন্তানের ছোট ছোট মাংসপেশি মজবুত করণ এবং তার দক্ষতা বৃদ্ধি করনের জন্য খুবই উপকারী। আপনার সন্তানকে ঘরের কাজের প্রতি উৎসাহিত করুন। তাকে ছোট ছোট কাজে সংযুক্ত করুন যেমন কাপড় ভাঁজ করা কিংবা ময়লা কাপড় গুলো ধোয়ার জন্য এনে দেওয়া, জুতার বক্সের মধ্যে জুতা গুলো সাজিয়ে রাখা ইত্যাদি।