সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ লম্বা বাক্য ব্যবহার করে কথা বলে।
✅ সঠিকভাবে ডিগবাজি দিতে পার।
✅ কাঁচি দিয়ে কাগজ কাটতে পারে।
✅ স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে।
✅ একই সাথে দুইটি ভাষা ব্যবহার করতে পারে।
✅ বইয়ের মধ্যে কমন শব্দগুলো চিহ্নিত করতে পারে।
? উচ্চতাঃ ১০৬.৮-১০৮.১ সে.মি
? ওজনঃ ১৭.৭-১৮.০ কেজি
মূল পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তানের স্মৃতি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এখন সে দুই থেকে তিনটি অক্ষরের শব্দ পড়তে পারে। অনেক সময় বাসার ঠিকানা সম্পূর্ণ মুখস্ত করে ফেলে। তাকে সাথে নিয়ে বই পড়লে সে সহজেই শিখতে পারবে। নিজে নিজে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে জামার বোতাম লাগাতে পারে। বল ক্যাচ ধরতে এবং ছুড়ে মারতে পারে। এই বয়সে তাঁর খাওয়া-দাওয়ার প্রতি বেশি বেশি খেয়াল রাখতে হবে, কেননা তার বাড়ন্ত শরীরে ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য ভিটামিনের প্রয়োজন পড়ে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান শারীরিক কার্যকলাপ যেমন দৌড়ানো, লাফানো, নাচানাচি করা, লাফদড়ি খেলা ইত্যাদি কাজগুলো করতে পছন্দ করে।বড়দের মত ভঙ্গি করে সে বল ছুড়ে মারে এবং ক্যাচ ধরতে চায়। যেসকল কার্যকলাপে চোখ এবং হাতের সমন্বয় রয়েছে সেগুলোতে সে আরো বেশি পারদর্শী হয়ে ওঠে। সে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এবং সুনিপুণভাবে কাঁচি চালাতে পারে। অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে সে ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি যেমন একসাথে দৌড়ানো, একে অপরকে ধাক্কা দেওয়া, মারামারি করা, হাত ধরে টান দেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো করে থাকে। সে এক পায়ের ওপর ১০ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। এছাড়াও ডিগবাজি দেওয়া এবং এক পায়ের উপর লাফানো তে পারদর্শী হয়ে ওঠে। এখন সে বাইসাইকেল চালানোর জন্য প্রস্তুত হয়। নিয়মিত কিছুদিন প্র্যাকটিস করলে সে সহজেই একটি বাই সাইকেল চালাতে পারবে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার সন্তান যদি শারীরিক কার্যকলাপ এবং খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে না চায়।
? যদি সে সবসময় অলস এবং মন্থর আচরণ করে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন যুক্তি-তর্ক দিয়ে কথা বলা শুরু করে। তার চিন্তা এবং কথার মধ্যে যথেষ্ট সমন্বয় গড়ে ওঠে। সে সব কিছুর প্রতি কৌতুহলী হয়ে ওঠে। কোন বিষয়ের প্রতি সুস্পষ্ট ধারণা এবং সে সম্পর্কিত উদাহরণ দিতে পারে। লম্বা বাক্য ব্যবহার করে কথা বলে। খেলার সময় সে বাস্তবভিত্তিক মডেলের অভিনয় করে খেলা করে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার সন্তান যদি অক্ষর, সংখ্যা কিংবা কোন শব্দ ঠিকমতো চিনতে না পারে।
? তাকে কোন কিছু পড়ে শোনানোর পরে জিজ্ঞাসা করলে সে যদি কিছুই বুঝতে না পারার প্রতিক্রিয়া দেখায়।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন তার বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করা এবং তাদেরকে খুশি করার বিষয়টি অত্যন্ত উপভোগ করে। বন্ধুদের সাথে একসাথে খেলার সময় নিয়ম মানা এবং জিনিসপত্র ভাগাভাগি করার বিষয়টি সঠিকভাবে মেনে চলে। আপনার দেওয়া নিয়মকানুনও সে ঠিকমতো পালন করতে চায়। এই বয়সে সে স্বাধীন থাকতে পছন্দ করে। তার কোন কিছু প্রয়োজন হলে সে ভাষায় প্রকাশ করে কিংবা নিজেই নিজের কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কোন কিছু অপছন্দ হলে হাত-পা ছোড়াছুড়ি না করে ভাষায় প্রকাশ করে সেটি জানিয়ে দেয়। এই বয়সে তার মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়। সুস্থ প্রতিযোগিতা তার জন্য উপকারী হতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? সন্তান যদি অতিরিক্ত লাজুক অথবা আক্রমনাত্মক বা হিংসাত্মক আচরণ করে।
? সে যদি অসামাজিক আচরণ করে।
? কোন কিছুতেই যদি তার কোনো উৎসাহ না থাকে।
? সে যদি চোখে চোখ রেখে কথা বলতে না পারে।
? তার সাথে কেউ কথা বললে সে যদি প্রতিউত্তর না করে।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার সোনামণি এখন নতুন নতুন শব্দ শিখে এবং সঠিকভাবে জটিল বাক্য ব্যবহার করে কথা বলে। সে কি, কেন, কিভাবে, কখন এই জাতীয় প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে। সে বিভিন্ন প্রিপজিশন যেমন উপর, নিচে, আগে, পরে ইত্যাদি ব্যবহার করে কথা বলে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
চার বছরের শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।এই বয়সে শিশুর খাদ্যে ১৬০০ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।
সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।
দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।
বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।
রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।
দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
৫৮ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১৬৪৩ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ :৫৯০-৬২০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৯ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি:২০০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ১৪২ গ্রাম/দিন।
পানি: ৯৫০মিলি/দিন।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
সন্তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পাশাপাশি সন্তানকে সতর্কতার শিক্ষা দেওয়াও প্রয়োজনীয়।ভাল এবং খারাপ স্পর্শ সম্পর্কে তাকে ধারনা দিন। স্কুল এ বন্ধুদের সাথে বিপদজনক কিছু করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। মোবাইল ফোনে অপ্রীতিকর কিছু দেখছে কিনা অথবা বয়স অনুপযোগী কোন কনটেন্ট বা গেম খেলছে কিনা সেদিকে লক্ষ করুন। রাস্তা পার হওয়া কিংবা পার্কিং এরিয়াতে বাবা মায়ের হাত ধরে থাকা, চুলার কাছে না যাওয়া, চাকু কিংবা কাঁচি দিয়ে নিজে নিজে কোন কিছু না কাটা ইত্যাদি বিষয়গুলো সাবধানতার ব্যাপারে সন্তানকে শিক্ষা দিতে হবে। বাহিরে নিয়ে গেলে তার প্রতি সব সময় বিশেষ নজর রাখুন যেন সে কোন গর্ত কিংবা ডোবা/পুকুর ইত্যাদি পানি জাতীয় জায়গায় না যায় এবং এগুলো থেকে সতর্ক থাকুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সন্তানকে সেসব জায়গায় নিয়ে যান যেখানে গিয়ে সে তার নতুন নতুন দক্ষতাগুলো কাজে লাগাতে পারবে, লাফানো কিংবা মই বেয়ে ওঠা কিংবা স্লাইড দিয়ে নিচে নামা এই ধরনের কাজ গুলি করতে পারবে। আপনার সন্তানকে অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে উৎসাহিত করুন এবং তাদের ভালো বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রশংসা করে তাকে শিখতে সাহায্য করুন। আপনার সন্তান এখনও তার বদমেজাজ প্রদর্শন করতে পারে। তাই তাকে ডিসিপ্লিন শেখানোর সময় এই বিষয়গুলো মনে করিয়ে দিন। সে প্যাডেল চেপে সাইকেল চালানো শিখে তাই তাকে রাস্তায় চলার নিয়মগুলি শেখান। আপনার সন্তানকে স্ক্রিন টাইম এর ব্যাপারে নির্দেশনা দিন। সারাদিনে এক ঘণ্টার বেশি তাকে কখনোই মোবাইল কিংবা টেলিভিশন দেখতে দেওয়া উচিত নয়। তার সঠিক ঘুমের সময় নির্ধারণ করুন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে সারাদিনে সব মিলিয়ে তার ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। ড্রয়িং, কাটিং, ক্রাফটিং ইত্যাদি বিষয়গুলো সন্তানের ছোট ছোট মাংসপেশি মজবুত করণ এবং তার দক্ষতা বৃদ্ধি করনের জন্য খুবই উপকারী। আপনার সন্তানকে ঘরের কাজের প্রতি উৎসাহিত করুন। তাকে ছোট ছোট কাজে সংযুক্ত করুন যেমন কাপড় ভাঁজ করা কিংবা ময়লা কাপড় গুলো ধোয়ার জন্য এনে দেওয়া, জুতার বক্সের মধ্যে জুতা গুলো সাজিয়ে রাখা ইত্যাদি।