সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ দৌড়ানোর সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে না গিয়েই দৌড়াতে পারে।
✅ দ্রুততার সাথে দড়িলাফ খেলতে এবং এক পায়ের উপর লাফাতে পারে।
✅ নিজের সম্পূর্ণ নাম এবং ঠিকানা বলতে পারে।
✅ দ্রুততার সাথে পেছনের দিকে হাঁটতে পারে।
✅ নিজের আবেগগুলো ভাষায় প্রকাশ করতে পারে।
? উচ্চতাঃ ১০৭.৯-১০৯.২ সে.মি
? ওজনঃ ১৭.৯-১৮.৪ কেজি
মূল পরিবর্তনঃ
অভিনন্দন!! আপনার সন্তান এখন ৫ বছরের বড় বাচ্চা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এখন থেকে তাকে জীবনের নিয়ম কানুনের শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। তাকে ঠিকমতো হাত ধোঁয়ার অভ্যাস করাতে হবে যেন স্কুল এ গিয়ে সে সঠিকভাবে হাত ধুতে পারে এবং রোগজীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পায়। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার বিশেষ করে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। তার সাথে বেশি বেশি কথা বলতে হবে, বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় সারাদিনে সে কি কি করেছে এইসব প্রশ্ন করে তার সাথে মিথস্ক্রিয়তা বজায় রাখতে হবে। আপনার সন্তান এখন অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারনা রাখে। এছাড়াও সে তার গল্পের বইয়ের গল্প গুলোর শুরু, মধ্যে এবং শেষ অংশও বুঝতে পারে। মোটকথা সে এখন অনেকটাই বড়দের মত আচরণ করে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন তার কাজ গুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম। তার শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথে শরীরের নড়াচড়ার সামঞ্জস্য বজায় থাকে। সে তার চলাফেরা থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজ কর্মের প্রতি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। এই বয়সে তার দুধ দাঁত পড়া শুরু হতে পারে। সে খাবারের পাত্র থেকে যথেষ্ট গুছিয়ে খাবার খেতে পারে। সে তার ডান এবং বাম পাশ সম্বন্ধে ধারণা রাখে তবে মাঝেমধ্যে তারমধ্যে কনফিউশন তৈরি হতে পারে। সে বড়দের সাহায্য ছাড়াই একা একা জামা পড়তে এবং খুলতে পারে। নিজে নিজে টয়লেটে যেতে পারে। বাচ্চাদের উপযোগী কাঁচি সুনিপুণভাবে ব্যবহার করতে পারে। এছাড়াও সে তিন আঙ্গুলের মধ্যে পেন্সিল ধরে লিখতে পারে। বাইসাইকেল চালানো শিখতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি সে একপায়ের উপর অন্তত ১০ সেকেন্ডও দাঁড়িয়ে থাকতে না পারে।
? শুনতে ও দেখতে অসুবিধা বোধ করে।
? হাঁটাচলা কিংবা দৌড়ানোর সময় যদি সে ক্লান্ত অনুভব করে।
? সে যদি কোন কিছু লেখালেখি কিংবা আঁকা আঁকি করতে না পারে।
? নিজের জামা খুলতে যদি তার অসুবিধা বোধ হয়।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন সময় সম্পর্কে সাধারণ ধারনা লাভ করে। যেকোনো বিষয়ের প্রতি সে ১০ সেকেন্ডের বেশি সময় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। ১০ থেকে ২০ টি বা তার বেশি বস্তু গণনা করতে পারে। সে মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গসহ মানুষের আকৃতি অঙ্কন করতে পারে। নিত্যদিনের ব্যবহার্য জিনিসের নাম বলতে পারে। অন্তত চারটি বা তার অধিক রং এর নাম বলতে পারে। এছাড়াও সে কিছু কিছু সংখ্যা এবং অক্ষর খাতায় লিখতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি সে ১০ পর্যন্ত গণনা করতে না পারে।
? আপনার সন্তান যদি কোন অক্ষর বা সংখ্যা চিনতে না পারে।
? কোন কাজের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখতে না পারে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন তার সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলা করার সময় নিজেকে কর্তৃত্ব পরায়ন আচরন করে। এই বয়সে আপনার সন্তান নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করে এবং তাদের সাথে তার জিনিসপত্র ভাগাভাগি করে নেয়। সে তার স্কুলে অপরিচিত এবং পরিবারের বাইরে অন্যান্যদের সাথে পরিচিত হতে চায় এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারে। আপনার সন্তান এখন বেশ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করে এবং সে বাস্তব ও কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করতে শিখে। সে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মাঝেমধ্যে মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারে। সে সারাদিন অনেক কথা বলে এবং লম্বা সময় ধরে আলাপচারিতা চালিয়ে যেতে পারে। বাহিরে যেতে পছন্দ করে এমনকি সেটি যদি হয় বাসার নিচের গ্যারেজ তাহলেও সে খুশি হয়ে যায়।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? সে যদি বাসার বাইরেও যেতে না চায়।
? আপনার সন্তান যদি প্রায়ই রাগান্বিত এবং দুঃখগ্রস্থ অবস্থায় থাকে।
? সে যদি তার সমবয়সীদের সাথে মিশতে না চায়।
? সে যদি কোন আবেগ প্রকাশ না করে এবং অন্যান্যদের সাথে ইন্টারেকশন না ঘটায়।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার সন্তান এখন কথার মধ্য দিয়ে তার নিজেকে প্রকাশ করতে পারে। সে অত্যন্ত সুন্দরভাবে কথা বলতে শিখে যা বড়দের কাছে বোধগম্য হয় এবং জটিল বাক্য গুলো অনুসরন করতে পারে। সে তার নিজের সম্পূর্ণ নাম এবং ঠিকানা বলতে পারে। সে অন্তত ২ টি বা তিনটি অক্ষরের শব্দ পড়তে পারে। যে কোন ঘটনা অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে ভাষায় প্রকাশ করতে পারে। অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের বাক্যগুলো সে ব্যাকরণ এর নিয়ম মেনে বলতে সক্ষম হয়।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
পাঁচ বছরের শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।এই বয়সে শিশুর খাদ্যে ১৬০০ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।
সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।
দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।
বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।
রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।
দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
৫বছর বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১৬৬০ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ :৫৯০-৬২০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৯ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি:২০০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ১৪২ গ্রাম/দিন।
পানি: ৯৫০মিলি/দিন।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
সন্তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পাশাপাশি সন্তানকে সতর্কতার শিক্ষা দেওয়াও প্রয়োজনীয়।ভাল এবং খারাপ স্পর্শ সম্পর্কে তাকে ধারনা দিন। স্কুল এ বন্ধুদের সাথে বিপদজনক কিছু করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। মোবাইল ফোনে অপ্রীতিকর কিছু দেখছে কিনা অথবা বয়স অনুপযোগী কোন কনটেন্ট বা গেম খেলছে কিনা সেদিকে লক্ষ করুন। রাস্তা পার হওয়া কিংবা পার্কিং এরিয়াতে বাবা মায়ের হাত ধরে থাকা, চুলার কাছে না যাওয়া, চাকু কিংবা কাঁচি দিয়ে নিজে নিজে কোন কিছু না কাটা ইত্যাদি বিষয়গুলো সাবধানতার ব্যাপারে সন্তানকে শিক্ষা দিতে হবে। বাহিরে নিয়ে গেলে তার প্রতি সব সময় বিশেষ নজর রাখুন যেন সে কোন গর্ত কিংবা ডোবা/পুকুর ইত্যাদি পানি জাতীয় জায়গায় না যায় এবং এগুলো থেকে সতর্ক থাকুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সন্তানের এখন পড়াশোনার অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। এটি তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এখন তাকে হাতে ধরে সবকিছু শেখাতে হবে। তবে কখনোই তাড়াহুড়া করা চলবে না। কোনোকিছুই প্রেসার দিয়ে তাকে করানো যাবেনা। এমনকি সে না চাইলে জোর করে লেখানোও উচিত নয়। সময়ের সাথে ধীরে ধীরে সবকিছুতেই সে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তাকে সেসব জায়গায় নিয়ে যান যেখানে গিয়ে সে তার নতুন নতুন দক্ষতাগুলো কাজে লাগাতে পারবে, লাফানো কিংবা মই বেয়ে ওঠা কিংবা স্লাইড দিয়ে নিচে নামা এই ধরনের কাজ গুলি করতে পারবে। আপনার সন্তানকে অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে উৎসাহিত করুন এবং তাদের ভালো বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রশংসা করে তাকে শিখতে সাহায্য করুন। আপনার সন্তান এখনও তার বদমেজাজ প্রদর্শন করতে পারে। তাই তাকে ডিসিপ্লিন শেখানোর সময় এই বিষয়গুলো মনে করিয়ে দিন। সে প্যাডেল চেপে সাইকেল চালানো শিখে তাই তাকে রাস্তায় চলার নিয়মগুলি শেখান। আপনার সন্তানকে স্ক্রিন টাইম এর ব্যাপারে নির্দেশনা দিন। সারাদিনে এক ঘণ্টার বেশি তাকে কখনোই মোবাইল কিংবা টেলিভিশন দেখতে দেওয়া উচিত নয়। তার সঠিক ঘুমের সময় নির্ধারণ করুন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে সারাদিনে সব মিলিয়ে তার ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। ড্রয়িং, কাটিং, ক্রাফটিং ইত্যাদি বিষয়গুলো সন্তানের ছোট ছোট মাংসপেশি মজবুত করণ এবং তার দক্ষতা বৃদ্ধি করনের জন্য খুবই উপকারী। আপনার সন্তানকে ঘরের কাজের প্রতি উৎসাহিত করুন। তাকে ছোট ছোট কাজে সংযুক্ত করুন যেমন কাপড় ভাঁজ করা কিংবা ময়লা কাপড় গুলো ধোয়ার জন্য এনে দেওয়া, জুতার বক্সের মধ্যে জুতা গুলো সাজিয়ে রাখা ইত্যাদি।