৯ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন

সাধারন বিষয় গুলোঃ

  • উপুড় হয়ে শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসতে পারে আবার বসা থেকেও নিজে নিজে শুয়ে পড়তে পারে।
  • কোন কিছু ধরে একা একা উঠে দাঁড়াতে পারে।
  • দাঁত বের হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

উচ্চতাঃ ৬৮.৮-৭০.৬ সে.মি

ওজনঃ ৮.২-৮.৬ কেজি

মাথার আকৃতিঃ ৪৩.৪-৪৪.৫ সে.মি

মূল পরিবর্তনঃ

নয় মাস বয়সী শিশু অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। এই সময় সে সারাদিনই খেলা করে পার করে। সে নিজ হাতে বল ছুড়ে মারে এবং আশা করে যে আপনি তাকে সেটি পুনরায় এনে দিবেন। এভাবে সে তার খেলাধুলায় অন্যদেরকেও ইনভলভ করতে চায়। এই সময়ে আরও একটি সমস্যা হলো সে সব কিছুই মুখে দিতে চায়। আপনি যদি বাবুর জন্য কোন বই আনেন তাহলে সেটি তার হাতে দেওয়া ঠিক হবে না কেননা সে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে সেটি মুখে দেয়ার চেষ্টা করবে। কারণ এই বয়সে কাগজ এবং টিস্যু পেপার তার সবচেয়ে প্রিয় খাবার।

দৈহিক পরিবর্তনঃ

নয় মাস বয়সী শিশুরা কোন কিছুর সাহায্য নিয়ে নিজে নিজে দাঁড়াতে পারে। এই সময়ে সে অনেকক্ষণ কোন প্রকার সাহায্য ছাড়াই বসে থাকতে পারে এমনকি বসা অবস্থা থেকে কোন কিছু ধরে দাঁড়িয়েও যেতে পারে। হামাগুড়ি দেওয়ার ব্যাপারে সে এখন পরিপক্ক হয়ে যায়। তার এক হাতে যদি কোন খেলনা থাকে তাহলে অপর হাত এবং পায়ের উপরে ভর দিয়েও সে হামাগুড়ি দিতে পারে। আপনার ছোট্ট সোনামণি এখন তার ছোট ছোট হাত দিয়ে যেকোন কিছু ভালোভাবে ধরতে পারে। 

চিন্তার বিষয়ঃ

এই বয়সে যদি আপনার শিশু সন্তান হামাগুড়ি দেওয়া না শিখে কিংবা তার হাত পায়ের উপর ভর না দিতে পারে তাহলে তার শরীরে ভিটামিনের বিশেষ করে ভিটামিন ডি এর অভাব থাকতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তাকে ভিটামিন ডি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ

আপনার বাবু এখন আপনার ইন্সট্রাকশন বুঝতে পারে। বিশেষ করে তাকে যদি কোন কাজে না করা হয় তাহলে সে সেটা বুঝে। কিন্তু মজার বিষয় হলো কোন বাচ্চাই সেই ‘না’ শব্দটি মানতে চায় না। বরং তাদেরকে যদি কোন কিছুতে না করা হয় তাহলে সে সেটি আরও বেশি বেশি করে। হতে পারে সে আরো বেশি মনোযোগ পাওয়ার জন্য এই কাজটি করে থাকে। এছাড়া সে এইদিক ঐদিক বা সামনে পিছে ঘুরে ফিরে খেলাধুলা করে।

চিন্তার বিষয়ঃ

আপনার বাবু যদি দুই হাতে খেলনা নিয়ে খেলতে না পারে কিংবা সে আগে পিছে ঘুরে ফিরে খেলাধুলা না করে তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ

আপনার বাবু এখন আপনার থেকে বেশি দূরে থাকা বা বেশিক্ষণ আপনাকে না দেখে থাকা পছন্দ করে না। এমনও হতে পারে অনেকক্ষণ আপনাকে না দেখলে সে কান্নাকাটি এবং চিৎকার শুরু করে দেয়। সে তার চেনা এবং অপরিচিত মানুষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। অপরিচিত কোন পরিবেশে কিংবা মানুষের সামনে সে অস্বস্তি বোধ করে এবং কান্নাকাটি করে। এই বয়সে শিশু কোন বস্তুর প্রতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করতে শিখে এবং বস্তুর স্থায়িত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। যেমন আপনি যদি তার সামনে পি-কাবু/টুকি‌ খেলাটি করেন তাহলে সে অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত হয়। এছাড়াও সে এখন পুনরাবৃত্তির বিষয়টি বুঝতে শিখে। তাই সে একই ছড়া বা গানের ভিডিও বারবার দেখতে পছন্দ করে। বিশেষ করে তার উপযোগী রাইমস বা ছড়াগান তার খুব পছন্দ। এই সময়ে আপনি যদি তার পছন্দের কোন খেলনা তার থেকে নিয়ে নেন কিংবা সে যখন তার পছন্দের ছড়া গানগুলো শুনে তখন তা বন্ধ করে দেন তাহলে সে চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে পারে।

চিন্তার বিষয়ঃ

সে যদি অপরিচিত মানুষদের দেখে কোন কান্নাকাটি কিংবা ভাবান্তর না দেখায় তাহলে সেটি আপনার জন্য চিন্তার বিষয়। কিংবা তার আশপাশে চলমান বিষয়ের প্রতি সে যদি কোনো আগ্রহ প্রকাশ না করে তাহলে সেটিও একটি চিন্তার বিষয়।

ভাষাগত পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন ভাষাগত দিক থেকেও অনেকটা এগিয়ে যায়। এতদিন সে মুখে নানারকম শব্দ করতো এবং দা দা ,বা বা শব্দগুলো উচ্চারণ করতো। কিন্তু এখন থেকে সে বুঝেই মাম্মা, বাবা সম্বোধন করে তার মা-বাবাকে ডাকা শুরু করে। এই সময়ে আপনি তার সাথে যত বেশি কথা বলবেন তার ভাষাগত দক্ষতা ততো তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে।

স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ

৯ মাস বয়সের মধ্যে আপনার বাবুর স্বাভাবিক ঘুমের একটি রুটিন তৈরি হয়ে যায়। এখন সে রাতে একটানা ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমায়। যদি তা না হয় তাহলে তাকে রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমের অভ্যাস করুন। এছাড়া সে সকালে ওঠার পরে আবার ১০টা কিংবা ১১ টার দিকে একবার ঘুম দেয়। আবার দুপুরে গোসল ও খাওয়ার পরে লম্বা সময়ের জন্য আবারও ঘুম দেয়। এভাবে তার ঘুমের একটি সাইকেল তৈরী হয়ে যায়।

চিন্তার বিষয়ঃ

৯ মাস বয়সের মধ্যেও যদি শিশুর ঘুমের সাইকেল ঠিক না হয় অথবা সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয় তাহলে এটি আপনার এবং আপনার সন্তান উভয়ের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

খাবার এবং পুষ্টিঃ

 এই বয়সের মধ্যে শিশুর খাবারের একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি হয়ে যায় এবং সেই খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিও তার শরীরে প্রবেশ করে।সে নিয়ম করে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে পটি করে এবং স্বাভাবিক নিয়মে হিসু করে। তার শরীরের ওজন এবং তার অ্যাক্টিভিটি যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে।

আপনার শিশুকে এই সময় ভিন্ন ভিন্ন খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। তাকে নিজ হাতে খেতে অভ্যস্ত করুন। আপনি যদি ছয় মাস বয়স থেকে বাবুকে blend করে খাওয়ানোর অভ্যাস করেন তাহলে সেটি আস্তে আস্তে পরিহার করুন। blend করে খাওয়ালে কোন খাবারের স্বাদই সে ঠিকমত পায়না। কোন খাবার যদি সে খেতে না চায় তাহলে জোর করে কখনোই খাওয়ানো ঠিক না।

ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ

৯ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৭১৪.১ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-

বুকের দুধ: ৮৭৫ মিলি/দিন।

ফর্মুলা দুধ (যদি খায়): ৮২৮ মিলি/দিন।

গরুর দুধ : একদমই না।

প্রোটিন: ১৩.৫ গ্রাম/দিন।

ফল/ফলের রস: ৪১ গ্রাম/দিন।

শাকসবজি: ২৫ গ্রাম/দিন।

শস্য দানা: ২৮ গ্রাম/দিন।

পানি: ৬০-১১০ মিলি/দিন।

শিশুর দৈনিক ২ থেকে ৩ বার তার প্রধান খাবার খাবে। ১২৫ মিলি কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে । এছাড়া সে আগের মতই ব্রেস্ট ফিডিং করবে।

যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ

হামাগুড়ি দেওয়ার সময় কোন ধরনের প্যাড কিংবা হেলমেট ব্যবহার করা উচিত নয়। কেননা এ সময় তার শরীরের মাংসপেশি মজবুত এবং শক্তিশালী হয়। এগুলো ব্যাবহারে তা বাধাগ্রস্থ হয়। যদি কোনো কারণে  ডাক্তার এগুলো ব্যবহার করতে বলেন তাহলে সেটি ভিন্ন কথা।

আপনার বাসার ইলেকট্রিক সুইচ/প্লাগ, বাসার দরজা, জানলা,ড্রয়ার, কেবিনেট এর পাল্লা জাতীয় জিনিসের উপরে সেফটি ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে।ধারালো বস্তু যেমন ছুরি-কাঁচি কিংবা ওষুধ বাবুর নাগালের বাইরে রাখুন। এই বয়সে কখনোই বাবুকে  বিছানায় একা রাখা যাবেনা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস তার মুখ এবং নাকের ভিতরে ঢুকে যেতে পারে সেগুলি তার হাতের নাগালের বাইরে রাখুন। তার কানে ময়লা জমলে তা পরিস্কারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সর্তকতা অবলম্বন করুন।

অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ

এই বয়সে আপনার শিশুর সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক খেলাগুলি খেলুন। যেমন পি-কাবু ,প্যাট-এ- কেক । তার সামনেই লুকোচুরি খেলা খেলুন। যেমন তার কোন খেলনা তার সামনে কোন কিছুর নিচে লুকিয়ে রেখে তাকে খুঁজতে দিন বা আপনি নিজেই খুঁজে বের করুন। এই খেলাটিতে আপনার শিশু অত্যন্ত খুশি হবে।তার হাতে নতুন নতুন খেলনা তুলে দিন। বিশেষ করে ব্লক এবং বিভিন্ন সেইপ টাইপ খেলনা তার বুদ্ধি বিকাশের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। বাবুর সাথে বেশি বেশি কথা বলুন। তার চোখের দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করুন। আপনি খেয়াল করবেন আপনার প্রশ্নে আপনার বাবু তার মাথা নেড়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছে। তার সাথে বেশি বেশি কথা বলার ফলে তার ভাষাগত উন্নতিও হবে। আপনার বাবুর ডায়াপার এর খেয়াল রাখুন। কখনোই যেন ডায়াপার অতিরিক্ত ভরে না যায় তার আগেই সেটি পরিবর্তন করে দিন। অপরিচিত কিংবা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির কাছে বাবু যদি যেতে না চায় তাহলে কখনোই জোর করে কোলে দিবেন না।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.