সাধারন বিষয় গুলোঃ
- নিজে নিজে উঠে দাঁড়াতে এবং বসতে পারে।
- চামচ ধরে খাবার মুখে দিতে শিখে।
- আশপাশের মানুষের কার্যকলাপ নকল করতে পছন্দ করে।
- ছোট ছোট জিনিস গুলো আংগুল দিয়ে ধরতে শিখে।
উচ্চতাঃ ৭০.১-৭১.৮সে.মি
ওজনঃ ৮.৫-৮.৯কেজি
মাথার আকৃতিঃ৪৩.৮-৪৫.০সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
১০ মাস বয়সী শিশু অনেকটাই পরিপক্ক। তার এখন দাঁত ওঠার সময়। অনেক শিশুরই এই বয়সে একটি কিংবা দুইটি দাঁত উঠে। এই বয়সের শিশু যেকোনো জিনিস আইডেন্টিফাই / পয়েন্টআউট করতে পারে। যেমন নির্দিষ্ট কোন খেলনার নাম বললে সেটি সে দেখিয়ে দিতে পারে কিংবা বাসায় কে কোন জিনিস ব্যবহার করে সেটিও সে হাত দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
এই সময় বাবু যে কেবল হামাগুড়িই দিতে পারে তাইনা বরং বসা অবস্থা থেকে সে নিজে নিজে উঠে দাঁড়াতেও পারে। সে একা একা উঠে বসতে পারে এবং কোন কিছু ধরে সামনের দিকে এগোতে পারে। সে এখন হাঁটার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সামনের দুই মাসের মধ্যেই সে হাঁটার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যায়।
চিন্তার বিষয়ঃ
- যদি আপনার সন্তান একা একা বসতে না পারে।
- সে যদি তার পায়ের উপরে ভর দিয়ে দাঁড়াতে না পারে।
- সে যদি অনায়াসে তার এক হাত থেকে অন্য হাতে জিনিস নিতে না পারে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার দশ মাস বয়সী সন্তান সবকিছু পর্যবেক্ষন করে এবং তার কপি করার চেষ্টা করে। এ সময় তাঁর সবচেয়ে প্রিয় খেলা হল পিকাবু/টুকি। সে তার প্রয়োজনীয় খেলনাটি নেওয়ার জন্য সেদিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
চিন্তার বিষয়ঃ
- সে যদি তার আশপাশের মানুষদেরকে চিনতে না পারে।
- তাকে তার খেলনা বা অন্য জিনিস দেখিয়ে দিলে সে যদি সেদিকে না তাকায়।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
তার পরিচিত এবং প্রিয় মানুষদের কাছে বারবার যেতে চায়। বিশেষ করে বাসার যে মানুষটি সবসময় বাইরে যায় তার কাছে শিশুটি যাওয়ার জন্য সব সময় উদগ্রীব হয়ে থাকে। সে এখন বাসার সবাইকে কপি করতে খুব পছন্দ করে। তার আশপাশের পরিবেশ এর কোন পরিবর্তন হলে সে অস্বস্তিবোধ করে এবং কান্নাকাটি করতে পারে।
চিন্তার বিষয়ঃ
অত্যন্ত উদ্দীপনার কোন বিষয়ে যদি আপনার বাবু নির্বিকার থাকে তাহলে এটি আপনার জন্য চিন্তার বিষয়।
ভাষাগত পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন ভাষাগত দিক থেকেও অনেকটা এগিয়ে যায়। এতদিন সে মুখে নানারকম শব্দ করতো এবং দা দা ,বা বা শব্দগুলো উচ্চারণ করতো। কিন্তু এখন থেকে সে বুঝেই মাম্মা, বাবা সম্বোধন করে তার মা-বাবাকে ডাকা শুরু করে। এই সময়ে আপনি তার সাথে যত বেশি কথা বলবেন তার ভাষাগত দক্ষতা ততো তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে।
চিন্তার বিষয়ঃ
এই বয়সে যদি আপনার বাবু প্রাথমিক কিছু শব্দ যেমন দাদা, বাবা, মামা ইত্যাদি না বলতে পারে তাহলে এটি একটি চিন্তার বিষয়।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
১০ মাস বয়সের মধ্যে আপনার বাবুর স্বাভাবিক ঘুমের একটি রুটিন তৈরি হয়ে যায়। এখন সে রাতে একটানা ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমায়। যদি তা না হয় তাহলে তাকে রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমের অভ্যাস করুন। এছাড়া সে সকালে ওঠার পরে আবার ১০টা কিংবা ১১ টার দিকে একবার ঘুম দেয়। আবার দুপুরে গোসল ও খাওয়ার পরে লম্বা সময়ের জন্য আবারও ঘুম দেয়। এভাবে তার ঘুমের একটি সাইকেল তৈরী হয়ে যায়।
চিন্তার বিষয়ঃ
১০ মাস বয়সের মধ্যেও যদি শিশুর ঘুমের সাইকেল ঠিক না হয় অথবা সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয় তাহলে এটি আপনার এবং আপনার সন্তান উভয়ের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
এখন থেকে শিশুকে স্বাভাবিক খাবারের সাথে আস্তে আস্তে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। এই সময় তাকে ভাত নরম করে চটকে সবজি এবং মাছ বা মাংস দিয়ে তিন বেলা পেট ভরে খাইয়ে দিতে হবে। অবশ্যই তার খাবারের মধ্যে বৈচিত্র থাকতে হবে। তাকে বিভিন্ন সবজি এবং মাংস দিয়ে খিচুড়ি রান্না করেও খাওয়ানো যায়।এছাড়াও ফলমূল এবং তরল জাতীয় খাবার নিয়ম করে তাকে খেতে দিতে হবে।আপনার শিশুকে এই সময় ভিন্ন ভিন্ন খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। তাকে নিজ হাতে খেতে অভ্যস্ত করুন। কোন খাবার যদি সে খেতে না চায় তাহলে জোর করে কখনোই খাওয়ানো ঠিক না।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
১০ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৭৩১.৯ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: ৮৭৫ মিলি/দিন।
ফর্মুলা দুধ (যদি খায়): ৭৩৯ মিলি/দিন।
গরুর দুধ : একদমই না।
প্রোটিন: ১৩.৫ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস: ৪১ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ২৫ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ২৮ গ্রাম/দিন।
পানি: ৬০-১১০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার তার প্রধান খাবার খাবে। ১২৫ মিলি কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে । এছাড়া সে আগের মতই ব্রেস্ট ফিডিং করবে।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
এখন থেকে আপনাকে আরো বেশি সতর্ক হতে হবে কেননা আপনার বাবু এখন যেকোন কিছু ধরে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করে। তাদের হাতের কাছে এমন কিছু না রাখুন যার উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে গেলে তা উল্টে শিশুর গায়ের উপরে পড়তে পারে। এছাড়াও ধারালো বা চোখা কোন বস্তু তার হাতের নাগালের বাইরে রাখুন। মোটামুটি আপনার বাসায় শিশুর চলাচলের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
এই বয়সে আপনার শিশুর সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক খেলাগুলি খেলুন। যেমন পি-কাবু ,প্যাট-এ- কেক । তার সামনেই লুকোচুরি খেলা খেলুন। যেমন তার কোন খেলনা তার সামনে কোন কিছুর নিচে লুকিয়ে তাকে খুঁজতে দিন বা আপনি নিজেই খুঁজে বের করুন। এই খেলাটিতে আপনার শিশু অত্যন্ত খুশি হবে।তার হাতে নতুন নতুন খেলনা তুলে দিন। বিশেষ করে ব্লক এবং বিভিন্ন সেইপ টাইপ খেলনা তার বুদ্ধি বিকাশের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। বাবুর সাথে বেশি বেশি কথা বলুন। তার চোখের দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করুন। আপনি খেয়াল করবেন আপনার প্রশ্নে আপনার বাবু তার মাথা নেড়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছে। তার সাথে বেশি বেশি কথা বলার ফলে তার ভাষাগত উন্নতিও হবে। আপনার বাবুর ডায়াপার এর খেয়াল রাখুন। কখনোই যেন ডায়পার অতিরিক্ত ভরে না যায় তার আগেই সেটি পরিবর্তন করে দিন।বাবু যদি যেতে না চায় তাহলে কখনোই জোর করে অন্য কারো কোলে দিবেন না। সর্বোপরি তাকে সবসময় চোখে চোখে রাখবো কেননা তার চলাচলের কারণে সে যেখানে সেখানে পড়ে গিয়ে কিংবা আঘাত পেয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।