সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ ঘাড়ের পেশি বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে যার ফলে সহজেই মাথা এদিক ওদিক ঘোরাতে পারে।
✅ ভার্বাল স্কিল আরো বেশি উন্নত হতে শুরু করে। মুখ দিয়ে বিভিন্ন শব্দ করে সে তার আশপাশের মানুষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে।
✅ বাবু এইসময় আর শুয়ে থাকতে চায় না। সে তার বাবা মায়ের কোলে চড়ে সবকিছু ঘুরে দেখতে চায়।
? উচ্চতাঃ ৬২.২-৬৪.০ সে.মি
? ওজনঃ ৬.৬-৭ কেজি
? মাথার আকৃতিঃ ৪০.৬-৪১.৬ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
খুব শীঘ্রই আপনার ছোট্ট সোনামণি এখন নিজে নিজে উল্টানো কিংবা কাত হওয়া শিখবে। তাকে উপুড় করে শুইয়ে দিলে সে তার হাটুতে ভর দিয়ে সামনের দিকে এগোতে চেষ্টা করে। সে তার ইমোশন গুলোকে আরো বেশি প্রয়োগ করতে শুরু করে। যেমন সে তখনই হাসে যখন সে খুশি হয় কিংবা হাসতে চায়। আবার অপরিচিত শব্দ শুনে সে ভয় পেয়ে কাঁদতে পারে। এখন থেকে তার আঙ্গুল চোষার প্রতি এক ধরনের নেশা তৈরি হয় তাই তাকে পেসিফায়ার বা চুষনি দেওয়া হয়।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
এই বয়সে বাবুর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো সে তার ঘাড় শক্ত করে মাথা এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষন করে। তাকে যদি বিছানার উপরে সোজা করে দাঁড় করান তাহলে সে তার পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। যদিও এই কাজটি করার সময় অবশ্যই আপনার তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। কেননা বাবু পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে চাইলেও তাকে বেশিক্ষণ সেটি করতে দেওয়া যাবে না এতে ছোট্ট শরীরের উপর চাপ পড়তে পারে। তবে দিনের মধ্যে ১/২ বার কাজটি করলে বাবুর জন্য একটি ভালো ব্যায়াম হয়ে যাবে। এছাড়াও সে এখন নিজে নিজে উল্টে যেতে চেষ্টা করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সফলও হয় ।এই সময় সে মাথা উঁচু করে চারিদিকে দেখতে থাকে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? একা একা মাথা ঘোরাতে না পারা কিংবা ঘাড় শক্ত করে ধরে রাখতে না পারা।
? হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে খেলাধুলা না করা।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
এই সময়ের মধ্যে আপনার সোনামণি তার পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে পরিচিত হয়ে যায়। সে তার আশপাশে বাসার অন্যান্য সদস্যদের দেখলে খুশি হয় এবং হাসে। এছাড়া কোলে ওঠার জন্য সে হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। সে তার পছন্দের খেলনা গুলো আশপাশের দেখলে সেগুলো হাতে নেওয়ার জন্য সেগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করে। তার ভাষাগত উন্নতিও এখন থেকেই শুরু হয়। যখন তার সাথে কথা বলেন তখন সে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে সে নিজেও আপনার টোনে কথা বলতে চায়।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? নতুন পরিবেশে আপনার বাবু যদি কোন রিয়াক্ট না করে কিংবা এই বয়সে সাধারণ আচরণ না করে তাহলে সেটি একটি চিন্তার বিষয়।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার বাবু এখন আর আগের মতো এলোমেলো ভাবে তার হাত নাড়িয়ে খেলে না বরং তার হাতের চলাচল সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে সম্পন্ন হয়। সে তার খেলনা গুলো হাতে নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। এছাড়া সে তখন আরো বেশি খুশি হয় যখন আপনি তার সাথে খেলা করেন। সে এখন নিজেই জানান দিবে যে কখন তার খেলার সময় আবার কখন সে আর খেলতে চায় না।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
এখন থেকে আপনার সোনামণির ঘুম কিছুটা কমতে শুরু করে। আগে যদি সে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকে তাহলে এখন তা কমে ১৪ ঘন্টায় নেমে আসতে পারে। দিনের মধ্যে সে অন্তত তিনবার গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? ঘুমের মধ্যে বাবুকে খাওয়ানোর ব্যাপারে যথেষ্ট সাবধান না হলে তা বাবুর জন্য নানা রকম ক্ষতির কারণ হতে পারে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
এই সময় বাবুর শারীরিক বৃদ্ধি এবং বাড়তি কার্যকলাপের জন্য তার খাবারের চাহিদা আগের থেকে অনেক বেড়ে যায়। সে যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন তার শারীরিক বৃদ্ধি অনেক বেশি পরিমাণে সম্পন্ন হয়। ঘুম থেকে জাগার পরপরই সে ক্ষুধার জন্য কান্নাকাটি করতে থাকে এবং খাবার না পাওয়া পর্যন্ত সে চিৎকার করতে থাকে। অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগার আগেই বাবুকে খাইয়ে দিতে হবে। মায়ের বুকের দুধ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না পায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো যেতে পারে। তবে বুকের দুধে যদি বাবুর চাহিদা পূরণ হয় তাহলে বাহিরের কিছু না খাওয়ানোই ভালো।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
এই বয়সে শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৬৪৪.৪ কিলোক্যালরি।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার বাবু এখন উজ্জ্বল রঙের জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আপনার পরিহিত চকচকে গহনা গুলোও ধরতে চায়। এই কারনে চোখা/সার্প গহনা পরে বাবুকে ধরার সময় সাবধান থাকুন। বাবুর হাতের কাছে কোন ছোট জিনিস রাখবেন না কেননা সে এখন হাতের কাছে যা পাবে সেটাই মুখে দেওয়ার চেষ্টা করে। এই বয়সে কখনোই বাবুকে বিছানায় একা রেখে যাবেন না। কারন সে এখন নিজে নিজে উল্টানো শিখে। একা থাকা তার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
এখন সময় এসেছে আপনার বাসাটি ছোট্ট সোনামণির জন্য উপযুক্ত করে সাজানো। আপনার বাচ্চার আশপাশে বাচ্চাদের খেলার উপযুক্ত জিনিস দিয়ে সাজিয়ে রাখুন। ফ্লোর ম্যাট, সফট টয়, র্্যাটল
টয়, বিভিন্ন মিউজিক্যাল টয় ইত্যাদি খেলনা দিয়ে আপনার বাসাটি সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলুন। এর ফলে শিশুর মানসিক বিকাশ অনেক ভালো হবে।
এই বয়সে যদি আপনার শিশু সন্তান নিজে নিজে উল্টানো না শিখে তাহলে তাকে বারবার উপুর করে শুইয়ে দিন যেন সে একা একা উল্টাতে চেষ্টা করে। এখন থেকেই আপনার শিশু সন্তানটি নানা রকম ক্রিয়া-কলাপ এর মাধ্যমে আপনাকে আনন্দ দিবে। তাই এই ছোট্ট আদুরে খেলনাটির সাথে সারাদিন কিভাবে আপনার সময় কেটে যাবে তা আপনি নিজেও টের পাবেন না।