সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ আপনার বাবু এখন তিন মাস অতিক্রম করবে যা আপনার এবং আপনার বাবুর মধ্যে একটি দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে যথেষ্ট।
✅ এই সময়ে সে তার জন্মের ওজনের থেকে প্রায় ১.৫-১.৮ কেজি বৃদ্ধি পায়।
✅ তার খাবারের চাহিদা আগের থেকে অনেক বেড়ে যায়। সে দিনে প্রায় ৮০০মিলি বুকের দুধ পান করে।
? উচ্চতাঃ ৫৯.৯-৬১.৪ সে.মি
? ওজনঃ ৬-৬.৪ কেজি
? মাথার আকৃতিঃ ৩৯.৫-৪০.৫সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
১২ সপ্তাহ বয়সে শিশু তার আশেপাশে কি ঘটছে সে সম্পর্কিত বিষয় গুলি বুঝতে শিখে। বিশেষ করে যখন আপনি তার খাওয়ানোর কিংবা গোসল করানোর প্রস্তুতি নেন সে সেটা বুঝতে পারে। আর খেলনা গুলোর কার্যকলাপগুলো সে বোঝে এবং সে অনুযায়ী আচরণ করে। তার ঘুমেরও একটি নির্দিষ্ট টাইম টেবিল তৈরী হয়ে যায়। মোটকথা এখন থেকে বাবু আগের মত এলোমেলো আচরণ করা কমিয়ে দেয়।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
জন্মের থেকে এখন পর্যন্ত শিশুরা যে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায় তা এই পর্যায়ে এসে কিছুটা শ্লথ হয়ে যায়। এই পর্যায়ে তার বৃদ্ধি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং আস্তে আস্তে হতে থাকে। এখন তাকে উপুড় করে শুইয়ে দিলে সে একা একা উল্টে সোজা হয়ে যেতে পারে। তার হাত পায়ের চলনও এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত ভাবে হয়।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার বাবু যদি কোন কিছু হাতে ধরতে না পারে।
? সে যদি তার মাথা ও ঘাড় সোজা করে রাখতে না পারে।
? সে যদি তার চোখ সবদিকে ঘোরাতে না পারে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
১২ সপ্তাহ অর্থাৎ তিন মাস বয়সী বাবুরা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবেও অনেকটাই পরিপক্ক হয়। সে তার আশপাশের কার্যকলাপগুলো কিভাবে হয় এবং কেন হয় সে সম্পর্কে ধারনা রাখা শুরু করে। যেমন তার গোসলের জন্য যখন তার জিনিসপত্র প্রস্তুত করা হয় কিংবা তাকে তেল মালিশ করা হয় তখন সে বুঝে যায় যে এখন গোসলের সময়। আবার যদি তার কোন খেলনা যেমন ঝুনঝুনি বা কোন শব্দ করে এমন খেলনা সম্পর্কে সে বোঝে যে এটি নাড়ালে শব্দ হবে। সে তার ঘুমের জন্য কিংবা মায়ের কোলে ওঠার জন্য নানা রকম আদুরে আওয়াজ করতে থাকে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? বিভিন্ন খেলনার প্রতি সে যদি রেস্পন্সিভ না হয় কিংবা নানারকম শব্দে সে উচ্ছসিত না হয় তাহলে সেটি একটি চিন্তার বিষয় হতে পারে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার বাবু এখন পরিবারের অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করতে পছন্দ করে। এছাড়াও সে বিভিন্ন আবেগীয় আচরণ করে থাকে। আপনার মুখের এক্সপ্রেশন দেখেও সে বোঝার চেষ্টা করে যে আপনি কি বলতে চান। আপনি হাসলে সেও হাসে আবার তার সামনে কান্না করলে তারও মন খারাপ হয়ে যায়।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? বাবু যদি অন্যদেরকে দেখে হাসি না দেয় কিংবা আপনি তার সাথে কথা বললেও যদি সে না হাসে।
? সে যদি নতুন কাউকে দেখে কোন এক্সপ্রেশন না দেয় কিংবা নির্দিষ্ট কাউকে দেখে ভয় পায় এবং কান্না করে।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
এই সময় শিশুরা রাতে বেশ লম্বা একটা সময় ধরে ঘুমিয়ে থাকে। তবে যেহেতু তাদের বাড়তি শরীর তাই ক্ষুধার কারণে সে রাতে কিছুটা সময়ের জন্য জেগে যেতে পারে। একবার পেট ভরে খাইয়ে দিলে সে অনেকটা লম্বা সময় জুড়ে ঘুমায়। এখন সে তার মাকে অত্যন্ত ভালোভাবে অনুভব করে। তাই ঘুমের সময় সে মায়ের বুকে ঘুমাতে চায়। বেশিরভাগ শিশুরা মায়ের বুকের দুধ খেতে খেতে সারারাত ঘুমাতে চায়। কিন্তু এটি মা এবং বাচ্চা উভয়ের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই অভ্যাসের কারণে মায়েরা সারারাত ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। ফলে তাদের শরীর ভেঙে পড়ে এবং নানা রকম জটিলতার সৃষ্টি হয়। আবার বাচ্চার ক্ষেত্রে দুধ খেতে খেতে ঘুমানোর ফলে অনেক সময় দুধ মুখের পাশ থেকে গড়িয়ে কানের ভেতর চলে গিয়ে কানে ইনফেকশন হয় কিংবা দুধ শ্বাসনালীতে গিয়েও আটকে যেতে পারে। যা বাবুর জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করে বাবুকে একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে ঘুম পাড়ানোর অভ্যাস করতে হবে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? ঘুমের মধ্যে বাবুকে খাওয়ানোর ব্যাপারে যথেষ্ট সাবধান না হলে তা বাবুর জন্য নানা রকম ক্ষতির কারণ হতে পারে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
এই সময় বাবুর শারীরিক বৃদ্ধি এবং বাড়তি কার্যকলাপের জন্য তার খাবারের চাহিদা আগের থেকে অনেক বেড়ে যায়। সে যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন তার শারীরিক বৃদ্ধি অনেক বেশি পরিমাণে সম্পন্ন হয়। ঘুম থেকে জাগার পরপরই সে ক্ষুধার জন্য কান্নাকাটি করতে থাকে এবং খাবার না পাওয়া পর্যন্ত সে চিৎকার করতে থাকে। অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগার আগেই বাবুকে খাইয়ে দিতে হবে। মায়ের বুকের দুধ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না পায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো যেতে পারে। তবে বুকের দুধে যদি বাবুর চাহিদা পূরণ হয় তাহলে বাহিরের কিছু না খাওয়ানোই ভালো।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
এই বয়সে শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৬৪৪.৪ কিলোক্যালরি।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
যেহেতু আপনার শিশু এখন হাত দিয়ে অনেক কিছু ধরা শিখে তাই আপনাকে সব সময় সাবধান থাকতে হবে যেন তার আশেপাশে এমন কোন জিনিস না থাকে যা ধরার ফলে তার কোন বিপদ ঘটতে পারে। বিছানার ওপরে কিংবা তার শোয়ার জায়গায় কখনোই ধারালো বা শক্ত কোন জিনিস রাখা যাবে না। এছাড়াও তার খেলনা কেনার সময়ও এমন সব খেলনা কিনতে হবে যা দিয়ে শিশু ব্যথা না পায়। সে তার খেলনা গুলি ধরে মুখের সামনে নিয়ে আসে এবং তার হাত থেকে অনায়াসেই সেগুলি মুখের উপরে পড়ে যায়। এতে করে খেলনা যদি শক্ত হয় তাহলে সে ব্যথা পেতে পারে। তাই এইসব বিষয়ে অভিভাবকদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃআপনার ছোট্ট সোনামণিকে এখন থেকে নতুন নতুন জিনিসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে শুরু করুন। তাকে এক রুম থেকে অন্য রুমে ঘুরিয়ে নিয়ে আসলে এবং বিভিন্ন জিনিস দেখালেও তার মানসিক বিকাশ অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। বিভিন্ন ধরনের র্যাটল টয় এবং সফট টয় দিয়ে তার আশপাশে ভরিয়ে রাখুন। এতে করে সে নানা ধরনের ভিন্ন ভিন্ন রং , টেক্সচার ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা পাবে। আপনি নিজেও তার সাথে অনেকটা সময় খেলাধুলা করে পার করুন। এর ফলে আপনার এবং আপনার বাবুর মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে।