সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ আপনার আদরের ছোট্ট সোনামনি এখন খুবই ছোট। তাকে নিবিড় ভাবে পরিচর্যা করুন। প্রথম সপ্তাহে বাবু ঘনঘন পটি করে। এ সময় পটির রং গাঢ় সবুজ বা কাল হয়। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই কারণ এতে মিউকাস, এমনিওটিক ফ্লুইড , স্কিন সেলসহ নানা ধরনের পদার্থ মিশ্রিত থাকে।
? উচ্চতাঃ ৪৯.২-৪৯.৮ সে.মি
? ওজনঃ ৩.৩ কেজি
? মাথার আকৃতিঃ৩৩.৯-৩৪.৫ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
জন্মের সময় থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত শিশু বেশিরভাগ সময় ঘুমে থাকে। সে সারাদিনে সব মিলিয়ে প্রায় ২ ঘন্টা কান্নাকাটি করে। এছাড়াও এ সময় বাচ্চার দৃষ্টি স্থির হয় না।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
বেশির ভাগ শিশু জীবনের প্রথম তিন থেকে চার দিনের মধ্যে জন্মের ১০% ওজন হ্রাস করে। আবার সাত দিনের মাথায় তা পুনরায় ফিরে পায়। এক সপ্তাহের বাচ্চাদের দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায় এবং প্রথম কয়েক মাস ধরে প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চার আউন্স পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? বাবুর দৈহিক স্বাস্থ্য অনেকটাই নির্ভর করে তাকে সারাদিন খাওয়ানো উপরে। আপনার বাবু সঠিক পরিমাণে খেতে পারছে কিনা তা খেয়াল করুন। নির্দিষ্ট সময় বা পর্যাপ্ত পরিমাণে পটি করছে কিনা সেটি দেখেও আপনি বুঝতে পারবেন যে বাবু ঠিকমতো খাবার পাচ্ছে কিনা। জন্মের ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি পটি বা পায়খানা না করে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
এক সপ্তাহ বয়সে শিশু মায়ের কন্ঠ চিনতে পারে। এছাড়াও ধারণা করা হয় প্রেগনেন্সিতে মা যদি কোনো নির্দিষ্ট মিউজিক বা মেলোডি অথবা বাচ্চাদের রাইমস শুনে থাকে তাহলে সেই সাউন্ডও বাচ্চা আইডেন্টিফাই করতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? নবজাতকের ওজন যদি অতিরিক্ত কমে যায় তাহলে সেটি চিন্তার বিষয় হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
এই সময়টাতে শিশু গন্ধ এবং স্পর্শের সংবেদন অনুভূতিতে প্রচুর পরিমাণে নির্ভর করে, তাই এই সপ্তাহে যতটা সম্ভব ত্বকের সাথে ত্বকের যোগাযোগ করা জরুরী।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
সাধারণত এক সপ্তাহ বয়সে বাচ্চারা ১৫থেকে ১৮ ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত বেশি ঘুমানো কিংবা সারাদিনে মোটেও না ঘুমানো কিংবা না ঘুমিয়ে কান্নাকাটি করা শিশুর জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
এক সপ্তাহ বয়সী বাচ্চার জন্যে শুধুমাত্র বুকের দুধই যথেষ্ট। বুকের দুধে শিশুর প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান থাকে। আলাদা করে বাইরের দুধ কিংবা পানি খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে যদি ডাক্তার সাজেস্ট করেন তাহলে বাইরের দুধ বা ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানো যেতে পারে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
এই বয়সের শিশুদের প্রয়োজনীয় ক্যালরি মায়ের বুকের দুধ থেকে পেয়ে থাকে। সাধারণত ৩৬৪.৭ কিলোক্যালোরি/দিন পরিমাণ ক্যালোরি প্রয়োজন হয়।
শিশুদের প্রতিদিন প্রতি পাউন্ড ওজনের প্রায় ৩৫-৫০ক্যালরি খেতে হবে। আপনার শিশু যদি ১২ পাউন্ড হয় তবে তার জন্য ৪২০-৬০০এর মধ্যে গ্রোথ-পাওয়ারিং ক্যালরি প্রয়োজন।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
প্রথম সপ্তাহে নবজাতক অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় থাকে। তাই তার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। সাবধানে কোলে নেওয়া এবং কোলে নেওয়ার সময় অবশ্যই হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। কেননা প্রথম এক মাস শিশুর ইমিউনিটি ক্ষমতা অত্যন্ত কম থাকে। তাই সহজেই তার শরীরে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। এ কারণেই নিজের হাত পরিষ্কার করার সাথে সাথে শিশুর ব্যবহৃত সকল জিনিস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
এ সময় শিশুর কান্নাকাটি করা স্বাভাবিক কিন্তু তা যদি অতিরিক্ত বেশি হয় তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অনেক সময় শিশুর কলিক জনিত বা কানে ব্যথা থাকতে পারে। যার কারণে শিশু অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
অভিভাবকরা বিশেষত বাচ্চার মা এবং বাবার এই সময়টাতে বাচ্চার প্রতি সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হয়। তাই তাদের উচিত বাচ্চার খেয়াল রাখার পাশাপাশি নিজেদের শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়া। কেননা এই সময় মা যতটা সুস্থ থাকবে সে তার বাচ্চার প্রতি ততো ভালো ভাবে খেয়াল রাখতে পারবে। তাই এই সময়ে মায়ের বেশি বেশি পুষ্টিকর এবং তরল জাতীয় খাবার খাওয়া এবং বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। বাচ্চা যতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকে মায়ের উচিত এই সময়টাতে ঘুমিয়ে নেওয়া কিংবা বিশ্রাম এর মধ্যে থাকা। ছাড়া অন্যান্য যারা বাচ্চার দেখাশোনা করেন তাদেরও বাচ্চার পাশাপাশি নিজেদের প্রতি এবং বাচ্চার মায়ের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চার মা যেন মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে সেই দিকে বাসার অন্যান্য অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া উচিত।