বাচ্চাকে কেন খিচুড়ি খাওয়াবেন?

অনেক বাবা মায়ের প্রশ্ন থাকে যে বাচ্চাকে খিচুড়ি খাওয়ানো কি আবশ্যিক? এব্যাপারে বিভিন্ন জনের বিভিন্নরকমের মতামত দেখা যায়। কেউ বলেন বাচ্চাকে খিচুড়ি খাওয়ানো জরুরী আবার কেউ বলেন না। এব্যাপারে আজকে আমি পুষ্টিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেন আপনাদের কাছে কিছু বিষয় তুলে ধরতে চাই।

আমি বলি হ্যা, ৬ মাস এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং এর পরে যখন বাচ্চাকে নতুন খাবারের সাথে পরিচয় করানো হয়, সেখানে খিচুড়ি খাওয়ানো টা বেশ জরুরী। এটা বাচ্চাদের গ্রোথ পিরিয়ড, এই সময় বাচ্চাদের ব্যালান্স ডায়েট খুব জরুরী। ব্যালান্স ডায়েট বলতে বোঝায় যে খাবারে পরিমিত পারিমানে কার্বোহাইড্রেট, ফার্স্টক্লাস প্রোটিন, ফ্যাটসহ অন্যান্য ভিটামিন এবং মিনারেলস থাকে। এই সবগুলো উপাদান একত্রে পেতে হলে আপনাকে আপনার বাচ্চাকে, ভাত/রুটি+মাছ/মাংস/ডিম+শাকসব্জি+তেল সবগুলো উপাদান একসাথে খাওয়াতে হবে। কিন্তু বাচ্চারা নতুন খাওয়া শেখার সময় মাছ/মাংস/ডিম সহজে খেতে চায় না। এতে তাদের পুষ্টি ঘাটতি হতে পারে। সেক্ষেত্রে খিচুড়ি হতে পারে সহজ এবং সস্তা সমাধান। পরবর্তীতে অবশ্যই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক খাবার ব্যাবস্থাপনায় আসতে হবে। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, বাচ্চাদের খাবারে বৈচিত্র আনাটা খুব জরুরী। তাই চেষ্টা করতে হবে একই খাবার বা ভিন্ন খাবার তাদের সামনে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার।

কিভাবে খিচুড়ি সহজ সমাধান??

মাছ/মাংস/ডিম এগুলো প্রোটিন জাতীয় খাবার। আবার ডালও প্রোটিন জাতীয় খাবার। তবে মাছ, মাংস, ডিম এগুলো ফার্স্টক্লাস প্রোটিন(প্রাণীজ প্রোটিন) বা উন্নতমানের প্রোটিন হিসাবে বিবেচিত, অন্যদিকে ডাল বা শিমের বিচি সেকেন্ডক্লাস প্রোটিন(উদ্ভিজ প্রোটিন) হিসাবে বিবেচিত।

পার্থক্যটা কোথায়?

একটা ফার্স্টক্লাস প্রোটিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাতে সবধরনের এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড উপস্থিত থাকে অন্যদিকে সেকেন্ডক্লাস প্রোটিনে এক বা একাধিক এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড মিসিং থাকে।

কিন্তু বাচ্চাদের শরীর ও মস্তিষ্কের সঠিক গঠনের জন্য ফার্স্টক্লাস প্রোটিন অত্যন্ত জরুরী। ৬ মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক বিকাশে জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান মায়ের বুকের দুধেই থাকে। তাই ৬ মাস পর্যন্ত ব্রেস্টফিডিং ই যথেষ্ট এবং খুব খুব খুবই জরুরী। ৬মাস পর থেকে বাচ্চাকে ঘরে তৈরি বাড়তি খাবার দিতে হয়। এটা বাচ্চার গ্রোথ পিরিয়ড, আর গ্রোথ পিরিয়ডে ফার্স্টক্লাস প্রোটিনের চাহিদা একটু বেশিই থাকে। প্রোটিন কে বডি বিল্ডিং ফুড বলা হয়। অর্থ্যাৎ কোন কারনে যদি আপনার বাচ্চার ফার্স্টক্লাস প্রোটিনের ঘাটতি থাকে তাহলে তার শারীরিক বৃদ্ধি সঠিকভাবে হবে না, সেইসাথে মানসিক বৃদ্ধিও ব্যাহত হতে পারে।

খিচুড়ি কি ফার্স্টক্লাস প্রোটিনের ঘাটতি পুরন করতে সক্ষম??

এবার আসি মুল প্রসঙ্গে। এতক্ষনের আলোচনায় এটুকু অন্তত বুঝতে পেরেছি যে, ফার্স্টক্লাস প্রোটিন কতটা গুরুত্বপুর্ণ। এখন প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে খিচুড়ি কি ফার্স্টক্লাস প্রোটিনের ঘাটতি পুরন করতে সক্ষম?? জ্বী অবশ্যই সক্ষম। কিন্তু সেটা কিভাবে? ডাল কে সেকেন্ডক্লাস প্রোটিন বলা হয়, কারন ডালের মধ্যে লাইসিন নামক একটি এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড মিসিং থাকে। অন্যদিকে চালের মধ্যে ঐ লাইসিন নামক এসেনশিয়াল এমাইনো এসিডটি বেশি থাকে। আমরা যখন চাল আর ডাল একত্রে রান্না করি তখন চালে অধিক পারিমানে অবস্থিত লাইসিন এমাইনো এসিড, ডালের যেখানে লাইসিন এমাইনো এসিডের ঘাটতি আছে সেখানে গিয়ে বাইন্ড করে। ফলে ডাল তখন ফার্স্টক্লাস প্রোটিনে পরিনত হয়। অর্থ্যাৎ আপনি যদি বাচ্চাকে মাছ-ভাত বা মাংস-খাওয়ান সেক্ষেত্রে যে পুষ্টিগুন পাবে, বাচ্চাকে ডালের খিচুড়ি খাওয়ালেও সেইম পুষ্টি পাবে। সাথে একটু সব্জি আর শাকের কচিপাতা যোগ করে দিলেই তৈরী হয়ে গেল আপনার বাচ্চার ব্যালান্স ডায়েট।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, আমি যদি খিচুড়ি রান্না না করে বাচ্চাকে ডাল-ভাত খাওয়ায়, তাহলে কি খিচুড়িরমত পুষ্টিগুন পাবে? জ্বী না, খিচুড়ির পরিবর্তে ডাল-ভাত খাওয়ালে সমপরিমাণ পুষ্টিগুন পাবে না।

পুষ্টিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেন

সিনিয়র পুষ্টি কর্মকর্তা

চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

জাকির হোসেন রোড, খুলশি।

চট্টগ্রাম।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.