সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ এ পর্যায়ে শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে তাই তার পুরানো জামা কাপড় ছোট হয়ে যায়।
✅ সে এখন যথেষ্ট বুঝমান। সে বেশ দূর থেকেও তার মাকে চিনতে পারে।
✅ সে জোরে জোরে আওয়াজ করতে শেখে এবং হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে।
? উচ্চতাঃ ৫৬.১-৫৮.৪ সেমি
? ওজনঃ ৫.৩-৫.৬ কেজি
? মাথার আকৃতিঃ ৩৮.৩-৩৯.১ সেমি
মূল পরিবর্তনঃ
১০ সপ্তাহ বয়সী শিশুকে উপুড় করে শুইয়ে দিলে সে তার পা দিয়ে বিছানায় ঠেলা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করে। অনেকটা হামাগুড়ি দেওয়ার মতো। যদিও সে একাজে পুরোপুরি সফল হয়না তবুও খানিকটা এগিয়ে যেতে পারে। তার ঘাড় এখন মোটামুটি শক্ত হয়ে যায়। এ সময় তাকে পায়ের ওপর দাঁড় করিয়ে দিলে সে পায়ে ভর দিতে চেষ্টা করে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
জন্মের পর থেকে তুলনা করলে দেখা যায় ১০ সপ্তাহের শিশু অনেকটাই বড় হয়ে যায়। এ সময় তার পুরোনো কাপড় গুলো আর সাইজে হয় না। এখন তার জন্য নতুন সাইজের কাপড় প্রয়োজন। তার হাত এবং পায়ের আংগুল গুলো এখন মোটামুটি সুগঠিত হয়ে যায় এবং সে আঙ্গুলগুলোর উপরে শক্তি প্রয়োগ করতে চেষ্টা করে। এ সময় তার পেছনে বালিশ দিয়ে সোজা করে বসিয়ে দিলে সে কিছু সময় বসে থাকতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? এই সময়ের মধ্যে শিশুর ঘাড় শক্ত না হলে কিংবা হাত পা সুগঠিত না হলে এটা শিশুর জন্য ভালো নয়।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
এসময় শিশু বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে বেশ পরিপক্ক হয়ে ওঠে। আপনি যখন ওর সাথে কথা বলবেন তখন সে তা বুঝতে চেষ্টা করে এবং সে অনুযায়ী প্রতিউত্তর করতে থাকে। সে যখন জেগে থাকে তখন প্রচণ্ড উত্তেজনার সাথে খেলাধুলা করে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার শিশু সন্তান এখন তার ভিন্ন ভিন্ন চাহিদার জন্য আবদার করতে থাকে। তার কান্নার ধরনও এখন অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে যায়। আপনি খেয়াল করবেন সে ঘুম কিংবা খাওয়ার জন্য ভিন্নভাবে কান্না করে। আবার কোন কিছু নিতে চাইলে কিংবা জিদ করলে অন্যভাবে কান্না করে। অর্থাৎ তার ভাব প্রকাশের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। সে তার অনুভূতিগুলো তার আচরণের মাধ্যমে আরো স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। গুটি কয়েক শিশু ব্যতীত অধিকাংশ শিশুরাই তাদের গোসলের সময় অনেক বেশি খুশি হয়। বাথটাবে তাদেরকে বসিয়ে দিলে তারা হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে পানিতে খেলাধুলা করতে থাকে। সব মিলিয়ে এখন সে বাসার সবার আদরের মধ্যমণিতে পরিণত হয়।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার বাচ্চা পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলাধুলার বদলে যদি সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে তাহলে সেটি একটি চিন্তার বিষয়।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
যেহেতু এই সময়ে আপনার সন্তান যথেষ্ট খেলাধুলা করে তাই তার শরীর পরিশ্রান্ত হয়ে যায়। এখন সে দিনের বেলা বেশি সময় ঘুমিয়ে পার করে। একটানা সে ৪-৫ ঘন্টাও ঘুমাতে পারে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এই বয়সে সে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঘুমায়। যেমন সে যদি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে তাহলে সকাল দশটা এগারোটার দিকে সে আবার কিছু সময়ের জন্য ঘুমিয়ে যায়। আবার দুপুরে গোসল এবং খাওয়ার পরে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সে ঘুমায়। ঠিক একইভাবে তার নির্দিষ্ট সময় মত সে ঘুমিয়ে থাকে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার সন্তান যদি সারাদিন মোটেও না ঘুমায় তাহলে তার মস্তিষ্ক পরিশ্রান্ত অবস্থায় থাকে। এটি তার জন্য ভালো নয়।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
এ সপ্তাহে আপনার বাবুর খাওয়ার পরিমাণ এবং ক্ষুধা বেড়ে যাওয়ার কারণে আপনি হয়তো তাকে বাহিরের দুধ বা ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানোর চিন্তা করতে পারেন। কিন্তু এর কোনই প্রয়োজন হয় না। এখনো শুধুমাত্র তার মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট। এ সময় বুকের দুধে সে বিভিন্ন ধরনের স্বাদ নেয়। আপনি যদি কোন ফল খেয়ে থাকেন তাহলে ফলের মিষ্টি স্বাদ দুধের মাধ্যমে সে পেয়ে থাকে। তাই এই সময় ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত যেন আপনার বাবু দুধের স্বাদে ভিন্নতা টের পায়। এর মাধ্যমে তার পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হয়।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
এই সপ্তাহে আপনার বাবুর ক্যালরি চাহিদা হলো ৫৭৩.৪ কিলোক্যালরি।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
এখন শিশুদের প্রতি আপনার আরো বেশি সচেতন হতে হবে। আপনার ছোট্ট সোনামনি তার পা দিয়ে বিছানায় ঠেলা দিয়ে তার জায়গা পরিবর্তন করতে পারে। তাই তাকে কখনোই বিছানায় একা রেখে যাওয়া যাবে না। পাশাপাশি তার খাওয়ার চাহিদা এখন আগের থেকে অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই যথাযথ সময়ে তাকে পেট ভরে খাওয়াতে হবে। সে যখন কান্না করে তার কান্নার ধরন বুঝে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার বাচ্চার সময়ের একটি তালিকা তৈরি করে সেই অনুযায়ী তার সারাদিনের কার্যকলাপ এর ট্র্যাক রাখুন। সে অনুযায়ী আপনি নিজেও আপনার কাজের একটি টাইম তৈরি করে নিন। তাহলে বাচ্চাকে সময় দিতে গিয়ে আপনার নিজের কাজের কোন ক্ষতি হবে না। বাবুকে সময় দেয়ার পাশাপাশি তাকে নিয়ে বাইরের খোলা বাতাসে ঘুরে আসুন। এই কাজটি সারাদিনের ক্লান্তিময় জীবন থেকে আপনাকে অনেকটাই প্রশান্তি দিবে।