গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: সম্ভাব্য জটিলতা ও প্রতিকার

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কাকে বলে?

উত্তর : গর্ভাবস্থায় যে কোনো সময়ে ডায়াবেটিস শুরু হলে বা প্রথমবারের মত ধরা পড়লে তাকে গর্ভকালীন বা Gestational ডায়াবেটিস বলে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস একধরনের সুপ্ত(latent) ডায়াবেটিস। ল্যাটেন্ট ডায়াবেটিস বলা যেটা কোনো স্ট্রেসফুল কন্ডিশনে ধরা পড়ে নরমালে থাকে না।যেমন কোনো সার্জিক্যাল অপারেশন বা প্রেগন্যান্সি বা ইনফেকশনে হয়ে থাকে।

কারা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন?

উত্তর : যে কোনো মানুষ যে কোনো বয়সে যে কোনো সময় এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায় :

প্রথমত, যাদের বংশে ও রক্ত সম্পর্কের নিকট আত্মীয় কেউ ডায়াবেটিস টাইপ টু আক্রান্ত

দ্বিতীয়ত, যাদের শারীরিক ওজন অনেক বেশি।(obesity)

তৃতীয়ত, যারা বহুদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করেন

চতুর্থত, যাদের নিম্নে উল্লেখিত কোনো ঘটনার history আছে :

ক) ৪ কেজি বা তার বেশি ওজনের বাচ্চা জন্মদান 

খ)মায়ের বয়স যদি ৩৫ এর বেশি হয়

গ) পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম 

ঘ) পূর্ব গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এর হিস্ট্রি থাকলে

ঙ)গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু যার কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নির্ণয়(screening) :

গর্ভের যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো বয়সের মায়েরই ডায়াবেটিস হওয়া সম্ভব। তাই লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই screening পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা যায়।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস screening এর জন্য উপযুক্ত সময় :

১)ঝুঁকিপূর্ণ মায়েদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায় থেকেই

২)ঝুঁকিমুক্ত অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহ অর্থাৎ ছয় থেকে সাত মাস

মায়ের সম্ভাব্য জটিলতা :

ক)এবোরশন বা গর্ভপাত 

খ)জরায়ুতে অতিরিক্ত পানির উপস্থিতি বা পলিহাইড্র্যামনিওস (Polyhydramnios)

খ)উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রি এক্লেম্পসিয়া

গ)খিঁচুনি

ঘ)সময়ের পূর্বেই প্রসব বা প্রিটার্ম লেবার।

ঙ)গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু

সন্তানের সম্ভাব্য জটিলতা :

ক)সন্তানের গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিক কমে যাওয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycaemia)

খ)অতিরিক্ত ওজনের শিশু বা ম্যাক্রোসোমিয়া(Macrosomia)

গ)কম ওজনের শিশু বা Intrauterine Growth Retardation (IUGR)

ঘ)জন্ডিস

ঙ)রক্তের ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হ্রাস পাওয়া (Hypocalcoemia and Hypomagnesemia)

চ)শ্বাসকষ্ট (Respiratory Distress Syndrome) 

ছ)জন্মগত ত্রুটি (Congenital Anomaly) ইত্যাদি।

জটিলতা প্রতিরোধের জন্য ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।তার জন্য নিম্নলিখিত নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে।

প্রথমত, নিয়মিত, সঠিক সময়ে, পরিমাণ মতো সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।প্রতিদিন মোট খাদ্যের ৫০% শর্করা, প্রোটিন ২০%,ফ্যাট জাতীয় খাবার ২০-৩০%থাকবে। ডায়াবেটিক ডায়েট মেইন্টেইন করতে হবে। মোট খাদ্যকে ৬ বেলা ভাগ করে খেতে পারেন।একজন গর্ভবতী মায়ের স্বাভাবিক ভাবে ১১-১২ কেজি ওজন বেড়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, চিনি,মিষ্টি, গুড়,মধু,গ্লুকোজ জাতীয় খাবার,খেজুর, তাল, আখের রস,মিছরি অর্থাৎ সরল শর্করা (simple carbohydrate) জাতীয় সকল খাদ্য পুরোপুরিভাবে বাদ দিতে হবে।

তৃতীয়ত, নিয়মিত ব্যায়াম বা দৈহিক পরিশ্রম করতে হবে।

চতুর্থত, রক্তের শর্করা পরিমাপক যন্ত্র দ্বারা (গ্লুকোমিটার) নিজের রক্তের শর্করা পরিমাপ করা শিখে নিতে হবে।

পঞ্চমত, শারীরিক যে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভধারনের ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি মাসে একবার, তারপর ৩৪ সপ্তাহ পর্যন্ত দুই সপ্তাহ পর্যন্ত, এবং বাকি সময়ে প্রতি সপ্তাহে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়ে এন্টি ন্যাটাল (গর্ভকালীন)চেক আপ করতে হবে যাতে ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল,যদি ইনসুলিন দেয়া হয় ইন্সুলিনের ডোজ সঠিক মাত্রায় থাকে এবং গর্ভস্থ বাচ্চার অবস্থা বুঝা যায়।

সতর্কতাঃ

রোগীর পরিবারের অন্য সদস্যরাও গ্লুকো মিটারে ব্লাড গ্লুকোজ মাপা শিখে রাখতে হবে।যাতে ব্লাড গ্লুকোজ কমে হাইপো বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে গেলে সাথে সাথে গ্লুকোজ খাওয়ানো যায়।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষন হলোঃ

খিটখিটে মেজাজ,মাথা ঘুরানো বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

মনে রাখতে হবে হাইপোগ্লাইসেমিয়া ইমারজেন্সি একটি বিষয়।সাথে সাথে গ্লুকোজ বা চিনি- পানি ইত্যাদি খেতে দিতে হবে।

গর্ভকালীন ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে ইন্সুলিন নিচ্ছে জটীলতাযুক্ত মা বা গরভস্থ বাচ্চার ওজন বেশি হলে সিজার করতে হবে।।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.