অভিভাবকদের মধ্যে ইদানীং একটি মুখ্য আলোচনার বিষয় হচ্ছে বাচ্চার জীবনে টেকনোলোজির ব্যবহার। বাচ্চার Smartphone ব্যবহার মনিটর করাটা সবথেকে চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার অভিভাবকের কাছে কারণ স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চার সাথে আপনি ২৪ ঘন্টা থাকতে পারবেন না। আমেরিকাতে ৭ থেকে ১০ বছর বয়সেই সাধারণত বাচ্চারা নিজেদের স্মার্টফোন পেয়ে যাচ্ছে। যা একটি ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে। আমাদের দেশেও এর খুব একটা ব্যতিক্রম হচ্ছেনা কিন্তু। অথচ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বাচ্চাদের হাতে যত দেরীতে Smartphone দেয়া যায় ততই ভাল। অন্তত বাচ্চাদের নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং Face to face communication এর মুল্য বোঝা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিৎ। সে হিসেবে বাচ্চা কলেজে ওঠার পর স্মার্টফোন দেয়া উচিৎ। বাচ্চার ভিতরে Maturity এবং দায়িত্ববোধের সঞ্চার আগে আনতে হবে তারপর স্মার্টফোন। আমরা সবাই জানি এবং মানি যে স্মার্টফোনের মতো Gadget গুলি খুবই আসক্তিকর। বাচ্চারা নাওয়া-খাওয়া, ঘুম, হোম ওয়ার্ক বন্ধ করে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কাটিয়ে দেয়। যদিও স্মার্টফোনের মাধ্যমে বাচ্চারা অনেক কিছু শেখে তারপরও এর খারাপ দিক গুলি অভিভাবকদের ভুলে গেলে চলবে না। যদি বাচ্চাকে ফোন কিনে দেয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে ওকে একটি Call and text only ফোন কিনে দিন। এরপরে যদি স্মার্টফোন কিনতেই হয় তাহলে লেটেস্ট মডেলের ফোনের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে Kid - friendly স্মার্টফোন কিনে দেয়া। দেখে কিনুন যাতে ফোনে Parental control features থাকে। ডাউনলোড করে নিন প্রয়োজনীয় Safety apps (যেমনঃ limited browsing, time usage, tracking)। Smartphone বাচ্চার হাতে দেয়ার আগে বাচ্চার সাথে একটা ডিল করে নিন। ডিল করার সময় আপনার নিয়মগুলিতে অনড় থেকে ওর মতামতকেও গুরুত্ব দিন। এতে ও ভাল অনুভব করবে, ও বুঝবে যে আপনি ওর ভালোর জন্যই নিয়মগুলি দিচ্ছেন।
আসুন যে ৫ টি নিয়ম বাচ্চাকে মেনে চলতে হবে তা জেনে নেইঃ
১। অপরিচিত নাম্বারের কল না ধরাঃ
অপরিচিত নাম্বার থেকে বিভিন্ন রকমের প্র্যাংক কল আসে, যেগুলোতে বাচ্চারা ভয় পেয়ে যেতে পারে। একজন অভিভাবক একবার তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শেয়ার করছিল আমাদের সাথে এভাবে- রাত ৩ টার দিকে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে তার ১২ বছর বয়সী বাচ্চার কাছে। ও কলটি রিসিভ করার পর অপর পাশ থেকে একজন তাকে বিকৃত গলায় বলে তার নাম্বারে ১০০০০ টাকা পাঠাতে নইলে তার উপর হামলা হবে সকালে। সেই বাচ্চা এরপরে ভয়ে কয়েকরাত আর ঘুমাতে পারেনি। এটা গেল হাজারো বাজে অভিজ্ঞতার একটি। অচেনা নাম্বার থেকে কল করে কেউ সহজেই আপনার বাচ্চাসহ পরিবারের তথ্য নিয়ে নিতে পারে যদি আপনার বাচ্চার বিশ্বাস সে কোনভাবে অর্জন করতে পারে। আর এই বয়সী বাচ্চারা খুব সহজেই যে কাউকে বিশ্বাস করে বসে। এই ব্যাপারগুলি বাচ্চার সাথে খোলাখুলি আলাপ করে বলুন অচেনা নাম্বার সবসময় এ্যাভয়েড করতে।
২। অনুপযুক্ত ছবি ও ম্যাসেজ পাঠানো যাবেনা কাউকেঃ
আপনার সন্তানকে বলুন যে ওর Smartphone ওর নিজের একটি এক্সটেনশন। সুতরাং ওকে সামাজিক নিয়মগুলি মেনে চলতে হবে। ভাল আচরণ এবং সঠিক শিষ্টাচার মেনে চলা উচিত। নিজের এমন কোন ছবি কোন অবস্থাতেই কারো সাথে শেয়ার করা যাবেনা যাতে প্রাইভেসি নাশের হুমকি থাকে। শুধু নিজের না, অন্য কারো অনুপযুক্ত ছবিও শেয়ার করা উচিৎ না। সবার প্রাইভেসির প্রতি সম্মান রাখা উচিৎ।
৩। ডাউনলোডের আগে অনুমতি নিতে হবেঃ
প্রয়োজনীয় অ্যাপের বাইরে নতুন কোন অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে যেন অবশ্যই আপনার অর্থাৎ অভিভাবকের অনুমতি নিতে নেয়। আপনি আগে অ্যাপটি নিজের ফোনে ডাউনলোড করে ব্যবহার করে দেখুন আপনার বাচ্চার জন্যে এটা নিরাপদ কি না। অ্যাপে যে বিজ্ঞাপন আসছে খেয়াল করুণ সেগুলো শিশুবান্ধব কিনা?
৪। প্রয়োজন না হলে GPS অফ রাখাঃ
আমি কোথায় আছি অর্থাৎ আমার অবস্থান কোথায় এখন এটা প্রাইভেট থাকা উচিৎ। GPS অন রাখলে খুব সহজেই মানুষকে Track করা সম্ভব। তাই প্রয়োজন না হলে GPS অফ রাখা উচিৎ।
৫। স্কুলে মোবাইল ফোন ব্যবহারের নিয়ম মেনে চলা:
স্কুলে ফোন ব্যবহারের কিছু নিয়ম থাকে সে গুলো অবশ্যই যেন বাচ্চা মেনে চলে। যেমন, স্কুলে ফোন Silent রাখা বা বন্ধ রাখা বা ফোন জমা রাখা।
স্মার্টফোনের বিকল্প কি হতে পারে?
শিশুর জন্য স্মার্টফোনের বিকল্প হতে পারে ভালো ভালো গল্পের বই। বই পড়ার উপকারিতা অবশ্যই স্মার্টফোনের চেয়ে বেশি। আপনার শিশুকে তার বয়সের উপযোগী ভালো ভালো বই পড়তে দিন। এমন কিছু পড়তে দিন যে বইগুলোতে অনেক ভালো ভালো ছবিসহ গল্প আছে। তাহলে শিশুর মনোযোগ ও সহজে সেদিকে বেশিক্ষণ থাকবে। স্মার্টফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত শিশু একদিনেই গল্পের বই পড়া পছন্দ করবে তা নয়। এই অভ্যাসটা পাল্টাতে সময় লাগবে। হাল না ছেড়ে তাকে উৎসাহ দিতে থাকুন পড়ার জন্য। আবার একই সাথে তাকে গল্পের বই পড়তে বলে আপনি যদি সারাক্ষণ ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকেন, তাহলে সে এই অভ্যাস ছাড়বে না। আপনিও দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় ফোন আর কম্পিউটারের কাজ গুলো সেরে ফেলুন। তার সামনে বই পড়ার অভ্যাস করুন। এতে শিশু আপনাকে দেখে দেখে শিখবে।
সন্তানের সৃজনশীলতার চর্চা করান কিডসটাইমের কোর্সে।কিডসটাইমের কোর্স গুলো দেখতে ভিজিট করুন নিচের লিংকে :