এই বয়সে আপনার শিশু আজ এবং গতকাল ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি মনে করতে সক্ষম। সে তার বন্ধুদের সাথে গ্রুপ করে খেলাধুলা করতে ভালোবাসে এবং তার খেলনা গুলি তাদের সাথে শেয়ার করে। তার মধ্যে একজনের পর আরেকজনের টার্ন নিয়ে খেলার ধারণা তৈরি হয়। এছাড়াও তার মধ্যে আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার উন্নতি ঘটে।
Category: ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু
৪৭ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন
এই বয়সে আপনার সন্তানের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটতে পারে। তাই তার পুরানো কাপড় হঠাৎ করেই ছোট হয়ে যেতে পারে কিংবা পরিবর্তন করে এক সাইজের বড় কাপড় দেওয়া লাগতে পারে। সে এখন অনেকটাই মিশুক প্রবণ হয়ে ওঠে। লজ্জা কমতে থাকে এবং খেলার মাঠে নতুন নতুন বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। আপনার সন্তানকে যদি প্রি স্কুলে ইতিমধ্যে দিয়ে থাকেন তাহলে সে স্কুলের পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়। সেখানে নতুন নতুন বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করা এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে মজার মজার গল্প ও ছড়া শুনে সে অত্যন্ত আনন্দিত হয়।
৪৮ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন
আপনার সন্তান এখন চার বছরের মাইলফলক অতিক্রম করতে চলেছে। সে এখন আর ছোট্ট টোডলার নেই বরং একটি বড় বাচ্চাতে পরিণত হতে যাচ্ছে। কারো সাহায্য ছাড়াই সে আত্মবিশ্বাসের সাথে হাঁটাচলা, দৌড়াদৌড়ি, সিঁড়িতে উঠা নামা এমনকি উপর থেকে নিচে লাফ দিতে সক্ষম। এছাড়াও বল ছুড়ে মারা এবং ক্যাচ ধরায়ও সে পারদর্শী হয়ে ওঠে। তার হাত এবং চোখের সমন্বয়ের মধ্যে পুরোপুরি সামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়। মোট কথা বলা যায় সে এখন অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী এবং অনেকটাই পরিপূর্ণ।
৪৯ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন
এই সময় আপনার শিশু মোটামুটি সব ধরনের কথা বলতে শিখে। সে ৫ থেকে ৬ টি শব্দের বাক্য ব্যবহার করে এবং তার কথাগুলো প্রায় সকলের কাছেই বোধগম্য হয়। সে মাঝে মাঝে আপনাকে উদ্ভট কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারে। কারণ সে তার চারপাশের জগতে কি ঘটছে তার সবকিছুই জানার আগ্রহ প্রকাশ করে। আপনার সন্তান এখন শারীরিকভাবে বেশ শক্ত হয়ে যায়। সে মই দিয়ে ওঠানামা করা, ডিগবাজি খাওয়া সহ অন্যান্য কাজগুলো বেশ দক্ষতার সাথেই করে থাকে।
৫০ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন
এই বয়সে আপনার শিশুর হাত এবং চোখের সমন্বয় এর পরিপূর্ণতা লাভ করে । আপনি তাকে বল ছুড়ে দিলে সে ক্যাচ ধরতে পারে। এছাড়াও সে সিঁড়ি, মই, জানালা কিংবা আসবাবপত্র বেয়ে সহজেই উপরে উঠে যেতে পারে। বাচ্চাদের কাঁচি ব্যবহার করে সে একা একাই ক্রাফটিং এর কাজ করতে পারে। না দেখে নিজে নিজে চতুর্ভুজ এবং ত্রিভুজ আকার আঁকতে পারে। এই বয়সে আপনার শিশু দুপুরে নাও ঘুমাতে চাইতে পারে। দুপুরের ঘুমের পরিবর্তে তাকে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে
৫১ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন
এই বয়সে সন্তান খুব সহজেই এবং অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ভাবে দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি, পেছনের দিকে হাঁটা, এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকা ইত্যাদি বিষয়গুলো রপ্ত করে ফেলে। হাত দিয়ে বল ছুড়ে দেওয়া অথবা ক্যাচ ধরার কাজেও সে পটু হয়ে ওঠে। আপনার সন্তান এখন মোটামুটি স্পষ্টভাবে কথা বলতে শিখে যায়। কিন্তু যদি কোনো কারণে সে স্পষ্টভাবে কথা বলতে না পারে তাহলে তার সাথে আদুরে/বাচ্চাদের স্বরে কথা না বলে বড়দের মতো স্পষ্ট ভাবে কথা বললে ধীরে ধীরে তার কথার আড়ষ্টতা দূর হয়ে সে স্পষ্ট ভাবেই কথা বলতে শিখবে। এখন থেকে তাকে শিষ্টাচার এবং আবেগ সম্বন্ধে ধারণা দিলে সে উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত ব্যবহার করতে পারবে। এমনকি তার রাগ কমানোর জন্যও সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
৫২ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন
আপনার সন্তানকে এখন প্রি-স্কুলে পাঠানোর বয়স। স্কুলে সে তার বন্ধুদের সাথে অনেক বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। একসাথে খেলাধুলা কিংবা যেকোনো কাজের মধ্যে থাকার ফলে তার মধ্যে একাত্মতাবোধ এর জন্ম হয়। এছাড়াও স্কুলে সে নিজের কাজ নিজেই করতে শিখে। তাই সে এইসময় স্বাবলম্বী হওয়া শুরু করে। একা একা সিঁড়ি দিয়ে ওঠা, নিজের টিফিন বক্স খুলে টিফিন খাওয়া, টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হলে নিজেই কাজটি সম্পন্ন করা সহ অন্যান্য অনেক কাজ সে একা করতে শিখে।ফলে সে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
৫৩ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন
এই বয়সে আপনার সন্তানের ওজন ১৫ কেজির উপর এবং উচ্চতা ১০১ সে.মি এর কাছাকাছি থাকে। এর কম বেশি হলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, আস্তে আস্তে এটি স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে সন্তানের ওজন যদি অতিরিক্ত কম বা বেশি হয় তাহলে অবশ্যই তাকে বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এ সময় তার ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। রাতে যেন অন্তত ৯ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ঘুমায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এখন সে মোটামুটি বড়দের মতো কথাবার্তা চালিয়ে যেতে পারে। তাকে যদি আপনি কোন প্রশ্ন করেন তাহলে সে সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারে।
৫৪ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন
এই বয়সে শিশুদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। তারা নতুন নতুন অক্ষর চিনতে শিখে এবং পেন্সিল দিয়ে সেগুলি খাতায় লিখে আয়ত্ত করে। ইংরেজি বড় হাতের এবং ছোট হাতের অক্ষর গুলো মোটামুটি পড়তে ও লিখতে পারে। বাংলা স্বরবর্ণগুলো লেখার চেষ্টা করে। এছাড়াও গণিতের সংখ্যাগুলো লেখা তার কাছে কিছুটা সহজ হয়ে থাকে। সে তার গল্পের বইয়ের কিছু কিছু লাইন মুখস্ত করে ফেলে। এছাড়াও তার বাসার ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার মুখস্থ করতে পারে।
৫৫ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন
এই বয়সে আপনার সন্তান তার সব কাজ নিজে করতে শিখে যায়। একা একা কাপড় পড়া এবং খোলা, দাঁত ব্রাশ করা, চামচ দিয়ে নিজ হাতে খাওয়া এমনকি গোসল করার কাজটিও সে আয়ত্ত করে ফেলে। সে বেশ স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে শিখে। ঘুমানোর সময় গল্প শুনিয়ে কিংবা ঘুমের গান গেয়ে ঘুম পাড়ালে সে প্রফুল্ল মনে ঘুমাতে যায়। এই বয়সে সন্তান তার চলাফেরায় আরো বেশি সুনিপুণ এবং আত্মবিশ্বাসী আচরণ করে।