প্রসূতি নারীদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কখন, কি করতে হবে। অতিরিক্ত আবেগ, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ভয়, রোগ-শোক ইত্যাদি গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, তাই এসব এড়িয়ে ভালো চিন্তা করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা যাবে না। পানিশূন্যতা রোধে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সব ধরনের ঝুঁকি এড়াতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক।
চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া:
অনেক দম্পতি প্রেগন্যান্সির পরিকল্পনাকাল থেকে চিকিৎসকের সাথে মাসে একবার দেখা করেন। আপনি যখন নিশ্চিত হবেন আপনি গর্ভবতী তখন থেকে নিয়মিত ডাক্তারের সান্নিধ্যে থাকুন। এই সময়ে অনেক সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চললে আপনার এবং আপনার সন্তানের কোনো ক্ষতি হবে না। নয়তো কোনো একটি ভুলের কারণে আপনি অথবা আপনার সন্তান কিংবা উভয়েরই ক্ষতি হতে পারে। এই সময় প্রতিমাসে ভালো গাইনোকোলোজিস্ট দেখানো দরকার। এই ব্যাপারে অবহেলা করা উচিত নয়।
পারিবারিক চিকিৎসার ইতিহাস জানা:
আপনার গর্ভকালীন অবস্থায় পারিবারিক চিকিৎসার ইতিহাস জানা জরুরী। আপনার ফুপু, দাদীদের সময়ে গর্ভবতী হলে কোনো সমস্যা হতো কিনা, কোনো সমস্যার সমাধান কীভাবে করতে হবে ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে নেওয়া ভালো। পারিবারিক বা বংশীয় কোনো সমস্যা থাকলে তা আগে থেকে চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করলে রোধ করা যাবে।
টিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ:
গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা গ্রহণ করতে হবে। টিকা দিলে শিশুকে ধনুষ্টংকার, ফ্লুসহ বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। এমনকি গর্ভাবস্থায় আপনারও কোনো সমস্যা হবে না। এই টিকাগুলো দিলে সহজে আপনি দুর্বল হবেন না, শারীরিক ও মানসিকভাবে উপকৃত হবেন। তাই গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা দিন। নতুবা শিশু শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই জন্মাবে। কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্যের প্রভাব শিশুর উপর পড়ে।
গর্ভাবস্থার দিন হিসাব করুন:
গর্ভকালীন দিনগুলোর হিসাব রাখা জরুরী। গর্ভাবস্থা ৩টি ভাগে বিভক্ত যেমন ৩+৩+৩=৯ মাস। প্রথম তিন মাসে হরমোনগত পরিবর্তন, বিপাকীয় পরিবর্তন, রক্তাচাপ জনিত সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে। গর্ভাবস্থার দিনগুলোর হিসাব করা এবং কবে ডেলিভারি হবে তা জানা জরুরী। বিশেষ করে ঋতুস্রাব চক্রের শেষ চক্রে ডেলিভারির তারিখ পড়ে। ৩৭-৪০ সপ্তাহের মধ্যে সাধারণত ডেলিভারি করানো যায়।
গর্ভাবস্থায় রক্তপাত ঘটতে পারে :
কখনো কখনো গর্ভাবস্থায় রক্তপাত ঘটতে পারে। এই ধরনের রক্তপাতে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করলে সমাধান পাওয়া যাবে।
গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবে ওজন যত হওয়া দরকার:
গর্ভাবস্থায় ওজন কত হওয়া দরকার তা নির্ভর করে আপনার বর্তমান ওজনের উপর। আপনার ওজন যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয় তাহলে অল্প পরিমাণে ক্যালরি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করুন। আপনার ওজন যদি অল্প হয়, দেহে ভিটামিন, ক্যালরি, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে তাহলে অধিক পরিমাণে খাবার খান। সঠিক পরিমাণের খাবার খেলে আপনার গর্ভের শিশু পুষ্টি পাবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত খাবার কখনো কখনো ক্ষতির কারণ হয়।
যেসব খাবার খাওয়া যাবে, যেসব খাওয়া যাবে না:
ভিটামিন ও পরিপূরক খাবারের পাশাপাশি আপনাকে খেতে হবে সুষম খাবার, পুষ্টিকর খাবার এবং প্রয়োজনীয় পথ্য। সাধারণত চিকিৎসক আপনাকে আপনার শারীরিক প্রয়োজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট দিয়ে দিবে। ক্যাফেইন, অ্যালকোহল ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন পান করলে বাচ্চার জন্মগত অক্ষমতা, সঠিক সময়ের পূর্বে ডেলিভারি হবে এবং বাচ্চা কম ওজনের হবে।
শারীরিক কাজ করতে হবে:
সন্তান জন্ম দেয়া নিঃসন্দেহে একটি বড় কাজ। সন্তান জন্ম দিলে শরীরের উপর বড় ধরণের প্রভাব পড়ে। গর্ভাবস্থায় শারীরিক ব্যায়াম, হাঁটাচলা প্রয়োজন। সারাদিন শুয়ে বসে না থেকে ছোট ছোট কাজ করা যেতে পারে। শারীরিক ব্যায়াম, হাঁটাচলা করলে অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাবেন এবং গর্ভকালীন ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন। আপনি সঠিক উপায়ে চললে আপনার গর্ভের শিশুর উন্নয়ন হবে। ছোট ছোট কাজ করলে ক্ষতি হবেনা। তবে ভারী কোনো কাজ করা যাবে না।