ToguMogu
article.title
 Jun 11, 2019
 

শিশুদের সাজগোজের জিনিসপত্রের দিকে আকর্ষণ কি স্বাভাবিক?

জ্বী হ্যাঁ, শিশুদের makeup করার অর্থাৎ লিপস্টিক কিংবা আই শ্যাডো লাগানোর যে প্রবণতা দেখা যায় তা খুবই স্বাভাবিক। শুধুমাত্র মেয়েশিশুরাই না ছেলে শিশুদের মধ্যেও এই প্রবনতা দেখা যায়। আমরা জানি, শিশুরা অনুকরণ করতে খুব ভালবাসে। এটি হল অনুকরণের ফল। অনেক শিশু আছে যারা বড়দের কাপড় পড়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে অনুকরণ করে। কখনো তাদের মা সাজে, কখনো বাবা আবার কখনো বড় ভাইবোন বা দাদা-দাদি,নানা-নানি। এভাবেই অনুকরণের মাধ্যমে তারা নিজেদের একটা অনন্য পরিচয় গড়ে তুলে। আপনার শিশু ছেলে হোক কিংবা মেয়ে তার সাজগোজের জিনিস নিয়ে খেলার অভ্যাসটিকে আপনি অন্য অভ্যাসগুলোর মতই দেখুন।

মা ব্যস্ত আছেন। এই তো সুযোগ! চটপট আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখভর্তি একগাদা লিপস্টিক মেখে নিল ছয় বছরের নোরা। ঠোঁটের বাইরে ছড়িয়ে গেল রং।

সাদা জামাটা দিয়ে মুছে নিল তা।

এই রে, সেরেছে! মা তো চোখ বড় করে পেছনেই দাঁড়িয়ে।

প্রায় সব মায়ের আর ছোট্ট মেয়েদের জন্য এটা যেন হররোজের ঘটনা। অনেকে মজা পেলেও এটি কিছুটা চিন্তারও কারণ বটে। রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন বললেন, শিশুদের সাজলে কোমল বা শিশুসুলভ ভাবটা থাকে না। আর বড়দের প্রসাধনী ব্যবহার করা শিশুদের স্পর্শকাতর ত্বক ও চুলের জন্য ক্ষতিকর। ছোট বয়স থেকেই যদি শিশুরা প্রসাধনী ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে খুব দ্রুতই ত্বক ও চুল নষ্ট হতে থাকবে। তিনি পরামর্শ দিলেন শিশুদের কী কী একদমই ব্যবহার করা ঠিক না।

ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা যাবে না বা বেজ মেকআপ করা যাবে না।

ব্লাশঅন, আইশ্যাডো ও মাসকারা ব্যবহার করা যাবে না। ব্লাশঅন ও শ্যাডো ব্যবহারে ত্বক নষ্ট হয় আর মাসকারা ব্যবহারে চোখের পাপড়ি ভেঙে বা ঝরে পড়ে তাড়াতাড়ি।

গাঢ় রঙা লিপস্টিক ব্যবহার করা ঠিক না। এতে শিশুদের ঠোঁট দ্রুত কালো হয়ে যাবে।

চুলে হেয়ার স্প্রে একদমই ব্যবহার করা যাবে না। এর ব্যবহারে চুল ঝরতে থাকে।

কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায়, কোনো পার্টিতে যাওয়ার আগে মাকে সাজতে দেখে বাচ্চা মেয়েটা হয় গোঁ ধরে বসে থাকে, না-হয় কান্নাকাটি শুরু করে দেয় তাকেও সাজিয়ে দেওয়ার জন্য। তাকে সহজে বোঝানোই মুশকিল। কী আর করা! তানজিমা বললেন এক-আধ দিন পার্টির জন্য শিশুরাও সাজতে পারে। তবে সেটা হবে শিশুসুলভ সাজ। কীভাবে সাজবে তা-ও সহজ করে বলে দিলেন তিনি।

নেলপলিশে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না বলে নখ রাঙাতে বাধা নেই শিশুদের।

ঠোঁটে চাইলে একদমই হালকা রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করা যাবে।

*চুলের জন্য পোশাকের সঙ্গে মানায় এমন হেয়ারস্টাইল বেছে নিতে হবে। সেই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর চুলে যেন টান না লাগে। তাতে ব্যথা তো লাগবেই, চুলও ছিঁড়ে আসবে।

*চুলে বেণি বা ঝুঁটি তো করাই যায়, এ ছাড়া খোলা চুলে রাউন্ড ব্যান্ডও ব্যবহার করা যায়। যাদের লম্বা চুল, তাদের সামনের চুলগুলো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বা নানা রকম বেণির বুনন করে ছোট ছোট ক্লিপ দিয়ে বাঁধা যায়। পেছনের চুল চাইলে খোলা রাখা যায় কিংবা বেণি বা ঝুঁটিও করা যায়। যাদের ছোট চুল বাধা যায় না, তাদের জন্য বাজারে নানা ধরনের ক্লিপ পাওয়া যায়। শিশুর চুল সাজিয়ে রাখে এই ক্লিপগুলো। ছোট চুলে পরা যায় প্লাস্টিক, ধাতব কিংবা কাপড়ের তৈরি রাউন্ড ব্যান্ডও।

তাদেরকে জোড় করে মানা করলে তারা আরও বেশি করে করতে চাইবে। সে যখন আপনার মেকআপের জিনিস দিয়ে খেলবে তখন অবশ্যই তার সাথে থাকবেন। কারণ এগুলিতে অনেক ক্ষতিকর কেমিক্যাল থাকে। যা শিশুরা না বুঝে লাগিয়ে ফেললে অনেক সমস্যা হতে পারে। যেমন- তাকে কখনই চোখে কাজল কিংবা মুখে ফেস পাউডার লাগাতে দিবেন না। কাজলে বিষাক্ত পদার্থ থাকে যা শিশুর চোখের জন্যে খুবই ক্ষতিকর। আর পাউডার যদি তার নিঃশ্বাসের সাথে ফুসফুসে চলে যায় তাহলে শ্বাসকষ্টের মত ভয়াবহ সমস্যাও হতে পারে। কিন্তু হ্যাঁ, আপনি তাদেরকে বাঁধা দিতে পারেন যে, সে বাসায় আপনার মেকআপের জিনিস দিয়ে খেলতে পারবে কিন্তু এটি শুধু খেলা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। সে স্কুল কিংবা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় ব্যবহার করতে পারবে না। ৩-৮ বছরের শিশু যদি সব জায়গায়ই অতিরিক্ত সাজগোজ করে যেতে চায় তবে রাগারাগি করবেন না। কোন দাওয়াতে গেলেও তাকে বুঝিয়ে বলুন যে তাকে তার বয়সের মত থাকলেই সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগবে। সব বয়সেরই একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। খুব বেশি সাজগোজ করলেই সুন্দর বা আকর্ষণীয় হওয়া যায় না। তাই তাকে ব্যক্তিত্ব সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট করে তুলুন। তাকে এভাবে বলতে পারেন, "মানুষের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই সবক্ষেত্রে প্রশংসনীয় হওয়া উচিৎ। যে দেখতে যেমনই হোক না কেন। তুমি ভালো ব্যবহার ও চরিত্রের অধিকারী হতে পারলে এমনি সুন্দর হতে পারবে। এতো প্রসাধন লাগবে না।"

 

 

Learning Toys
Related Articles