আমাদের দেশে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে- শিশুর মতো ঘুমানো। মানে হচ্ছে গভীর ও শান্তির ঘুম দেওয়া। শিশুরা কিন্তু বাস্তবে এত শান্তভাবে ঘুমায় না, অনেক ক্ষেত্রে গভীর ঘুমেই তারা অনেক কাণ্ড-কারখানা করে। কখনো কাঁদে, কখনো গোঙায়, আবার নাক দিয়ে বাঁশির মতো শব্দ করে শ্বাসও নেয়। অনেক বাবা-মার কাছেই শিশুর ঘুমের এই অভ্যাসগুলো অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যাপার গুলো আসলেও সমস্যারই ইঙ্গিত দেয়। তবে সবসময় না। আসুন জেনে নেই শিশুর এমনই ৫টি ঘুমের অভ্যাসের আদ্যোপান্ত-
১। ঘুমের মধ্যে শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দেওয়াঃ
আপনি হয়তো খেয়াল করে থাকবেন, শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাস রিদমিকভাবে পরিবর্তিত হয়। ঘুমের প্রথম দিকটায় তারা দ্রুত ও ঘন ঘন শ্বাস নেয়। ঘুম যতই গভীর হয় তাদের শ্বাস নেওয়ার মাত্রা কমে যায়, ধীরে ও থেমে থেমে শ্বাস নেয়। কখনো ৫-১০ সেকেন্ডের মতো শ্বাস নেওয়া বন্ধ থাকে। ডাক্তাররা একে periodic breathing বলে থাকেন। ৬মাস বয়স পর্যন্ত সব শিশুর মাঝেই এটা তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশু ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। একে বলা হয় central sleep apnea। এটা হওয়ার কারণ- মস্তিষ্কের যে অংশ শ্বাস নেওয়া নিয়ন্ত্রন করে তার অনিয়মিত কার্যক্ষমতা।
কি করা উচিত?
যদি এমন হয় শিশুর শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে, শিশুর নাক-ঠোঁট-জিভ-নখ-কপাল নীল হয়ে যাচ্ছে, খুব কাশছে তাহলে হয়তো তার অক্সিজেন পেতে সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থায় তাকে জাগিয়ে দিন। আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বা স্পর্শ করে জাগান। তার শ্বাস নেওয়ার ব্যাপারটি অস্বাভাবিক মনে হলে ভালো শিশু বিশেষজ্ঞ দেখান।
২। ঘুমের মধ্যে নাক ডাকাঃ
অনেক শিশুই ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে। অনেকে বেশ জোরেই নাক ডাকে। শিশুর যদি ঠাণ্ডা লেগে নাক বন্ধ হয়ে থাকে, তাহলে সে মুখ দিয়ে শ্বাস নেবে আর তখন নাক দাকার শব্দ হবে। তখন এটাই স্বাভাবিক। তবে, নবজাতকেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জন্মের ১ম কয়েক সপ্তাহ নাক ডাকেকি করা উচিত?
যখন শিশুকে ডাক্তারের কাছে রেগুলার চেক-আপের জন্য নেবেন তখন নাক ডাকার বিষয়টি জানান। নাক ডাকা অস্বাভাবিক মনে হলে তো অবশ্যই জানাবেন। ডাক্তারই তখন পরীক্ষা করে আসল সমস্যা বের করবেন।
৩। ঘুমের মধ্যে ঘেমে যাওয়াঃ
অনেক শিশু ঘুমিয়ে গেলে ঘেমে যায়। বিশেষ করে রাতে যখন সে গভীরভাবে ঘুমায়। আমরা বড়রাও কিন্তু ঘুমের মাঝে ঘেমে যাই কখনো কখনঘেমে যাওয়ার ব্যাপারটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে অস্বাভাবিকভাবে ঘামতে থাকা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। অতিরিক্ত পরিমানে ঘামা বড় কোন রোগের ইঙ্গিত দিতে পারকি করা উচিৎ?
প্রথমেই খেয়াল রাখুন শিশুকে যে ঘরে ঘুম পাড়াচ্ছেন সেই ঘরের তাপমাত্রার দিকে। অত্যধিক গুমোট বা গরম ঘরে শিশুকে ঘুম পারাবেন না। শিশু যখন ঘুমাবে তখন তার উপর একগাদা কাপড় বা কাথা/বালিশ চাপাবেন না। বা বড় বালিশ দিয়ে ভার দিবেন না। হাল্কা-পাতলা জামা কাপড় পড়ান। এমনভাবে কাঁথা বালিশ দিন যাতে বাতাস চলাচল করতে শিশুকে হাল্কা-পাতলা ভাবে শোওয়ালেও যদি সে অতিরিক্ত ঘামে তাহলে অতিসত্বর ভালো শিশু বিশেষজ্ঞ দেখান।
৪। ঘুমের সময় শরীর দোলানোঃ
মাথা ঠোকাঃঅনেক সময় ঘুমের মাঝেই শিশু রকিং চেয়ারের মতো দুলতে থাকে। বালিশে বা বিছানায় মাথা ঠোকে। অনেক শিশু জেগে বা বসে থাকা অবস্থায়ও এভাবে দোলায় বা মাথা ঠোকাঠুকি করে। এই ব্যাপারটি সাধারণ শিশুর ৬-৯মাস বয়স থেকে শুরু হয়। এটা কোন আচরণগত সমস্যকি করা উচিৎ?
জোর করে শিশুর দুলুনি থামানোর প্রয়োজন নেই। অনেক সময় সে দুলুনি আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। শিশু বেশি দুললে বা মাথা জোরে ঠুকলে তাকে জাগিয়ে দিন। তাকে দেওয়াল বা খাটের সাইড থেকে সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় ঘুম পাড়ান। দোলনায় ঘুম পাড়ালে, দোলনার স্ক্রুগুলো টাইট করে দিন যাতে কম দোলে।
৫। ঘুমের মধ্যে দাঁত কিড়মিড় করা:
বেশিরভাগ শিশুই ঘুমের মধ্যে দাঁত কিড়মিড় করে। আমরাও হয়তো ছোটবেলায় করতাম। যেসব শিশুর নতুন দাঁত উঠছে তারা বেশি কিড়মিড় করে। মাঝে মাঝে শিশুরা এত জোরে কিড়মিড় শব্দ করে যে মনে হতে পারে দাঁত ভেঙ্গে যশিশুর নতুন দাঁত ওঠার সময় তার মাড়ি শিরশির করে। সেই অনুভূতি থেকেই তারা বেশিরভাগ সময় দাঁত কিড়মিড় করে থাকে। মাঝে মাঝে শ্বাস নিতে না পারা, নাক বন্ধ থাকলেও তারা এমন করে।
কি করা উচিৎ?
শিশু খুব বেশি জোরে দাঁত কিড়মিড় করলে বিষয়টি ডাক্তার বা সরাসরি ডেন্টিস্টকে জানান। তারাই আসল কারণ খুঁজে বের করবে।