নিউজফিড এ প্রায়ই দেখি মায়েরা উদ্বিগ্নতার সাথে জানতে চায়ঃ
*বাচ্চাকে সবসময় Diaper পড়ালে সমস্যা হবে কিনা?
*কে কোন ডায়াপার পড়াচ্ছ?
*ডায়াপার এরিয়াতে লাল লাল দানা উঠেছে, কি করবো?
যারা এসব প্রশ্নের উত্তর জানে এবং সবসময় ডায়াপার পড়ায়, তাদেরও সমস্যার শেষ নাই। তাদের সমস্যার কারন বেশিরভাগ সময়ই বাচ্চার নানি-দাদি-মামি-ফুফু-চাচিদের বিনামূল্য মতামত। তাদের মতামত বিভিন্নরকম হয়ে থাকে, যেমনঃ
* সবসময় ডাইপার পড়ালে বাচ্চা কষ্ট পায়।
* বাচ্চার প্রাইভেট পার্ট এ বড় হইলে সমস্যা হবে।
* মা হইছো, আর গু-মুত কাচবা না?
* গু নিজের হাত দিয়ে না ধুইলে বাচ্চার প্রতি টান হয় না!!! (এক আপুর এই পোস্ট পরে আমার মাথা চক্কর দিয়েছিল)
তারা আবার উদাহরন দিতেও পটু। যেমনঃ ” চিন্তা কর, আমাদের পিরিয়ড এর সময় প্যাড পরে থাকতে আমাদের কত খারাপ লাগে? এবার বাচ্চাটার কথা চিন্তা কর!!”
এখন আমি আমারটা দিয়েই বলি। আমার মেয়ের বয়স ১৮ মাস। ওকে ১৭ মাস পর্যন্ত সারাক্ষণ ডায়াপার পড়িয়েছি। হ্যা, নিজের অভিজ্ঞতার অভাবে শুরুর দিকে ১-২ বার র্যাশও হইসে। অনেক মায়েরা আছে যারা একদম ডায়াপার না পড়িয়ে বা শুধু রাতে ডায়াপার পড়িয়ে বাচ্চা মানুষ করছে। তাদের বাহবা দেয়া ছাড়া আমার আর কিছু বলার নেই। তারা সুপার মম। কারন গত ১ মাস ধরে পটি ট্রেনিং করাতে যেয়ে আমি বুঝে গেসি ডায়াপার ছাড়া বাচ্চা বড় করা কত কঠিন!
এখন কিছু কথা বলিঃ
* না, ডায়াপার সবসময় পড়ালে কোনো সমস্যা নেই। বাচ্চা কষ্ট পায় না, বরং বারবার কাথা ভিজে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা কমে যায়। ঘুমের ব্যাঘাতও কম হয়।
বাচ্চার গরম লাগে না, কারন ডায়াপার গুলো তৈরি করা হয় কটন টাইপ কাগজ দিয়ে। বেশিরভাগ কোম্পানি আবার এয়ার ফ্লো যাতে হয় সেই দিকটাও খেয়াল রেখে বানায়।
ওহ হ্যা, বাচ্চার প্রাইভেট পার্টেও কোনো সমস্যা হয় না! আমি নিজে সাক্ষী!
তবে সারাক্ষণ ডায়াপার পড়ালে কিছু জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সেগুলো নিচে লিখছিঃ
১. যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী একটু ভালো ব্র্যান্ড এর ডায়াপার সিলেক্ট করতে হবে। আর প্রথম কিছুূদিন খেয়াল রাখতে হবে বেবি সেটাতে কম্ফর্ট পাচ্ছে কিনা। নাহলে ব্র্যান্ড পরিবর্তন করতে হবে।
২. ৩-৪ ঘণ্টা পর পর নিয়ম করে ডায়াপার বদলাতে হবে। তারো আগে ভারি হয়ে গেলে আরো আগেই বদলাতে হবে।
৩. প্রতিবার ডায়াপার বদলানোর সময় wet tissue বা নরম সুতি কাপড় পানিতে ভিজিয়ে হালকা চাপ দিয়ে দিয়ে পরিস্কার করে দিতে হবে। শীতকালে কুসুম গরম পানিতে wet tissue ভিজিয়ে বা সুতি কাপড় ভিজিয়ে পরিষ্কার করলে বাচ্চার ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকবে না।
৪. প্রথমে পি করার জায়গা, পরে পু করার জায়গা পরিস্কার করতে হবে। (মেয়ে বেবিদের জন্য বেশি প্রযোজ্য)।
৫. পরিস্কার হয়ে গেলে ২-৫ মিনিট একটু খোলা রেখে ন্যাপি র্যাশ ক্রিম/ vaseline মাখিয়ে দিতে হবে। তাহলে পি এর এমোনিয়া চামড়ায় লাগবে না। র্যাশ ক্রিম বা ভ্যাসলিন স্কিন প্রোটেক্টর হিসেবে কাজ করে। তাই এটি ব্যবহারে র্যাশ ওঠার ভয় থাকবে না।
যাইহোক, যেই মায়েরা তাদের মা-শাশুরির অভিযোগে বিরক্ত তাদের বলি, আমাদের মা-শাশুরিদের ডায়াপার পড়ানোর অপশন থাকলে তারাও পড়াতো। আর তাদের মনে করিয়ে দিন এটা ২০১৮ সাল। তাতেও কাজ না হলে নিজের জায়গায় অটল থেকে প্রতিবাদ করুন। তাদের বুঝিয়ে দিন, বাচ্চা আপনার নিজের এবং তার ভালো মন্দ বোঝার দায়িত্বও আপনার।