ToguMogu
ToguMogu
article.title
 Feb 10, 2025
 423

শিশুকে স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখবো কিভাবে?

শিশুকে স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখবো কিভাবে?

বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে স্মার্টফোন আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। তবে ছোট বাচ্চাদের জন্য অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন—চোখের ক্ষতি, মনোযোগের অভাব, ঘুমের ব্যাঘাত এবং সামাজিক দক্ষতার ঘাটতি। অনেক মা-বাবা সফলভাবে তাদের সন্তানদের স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখতে পেরেছেন। তারা কীভাবে এটি করেছেন? আসুন কিছু কার্যকর পদ্ধতি দেখে নেই।


শিশুর স্মার্টফোন আসক্তির কারণ

অনেক অভিভাবক সন্তানদের শান্ত রাখার জন্য বা ব্যস্ততার কারণে তাদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেন। খাবার খাওয়ানো, কান্না থামানো বা অবসর সময় কাটানোর জন্য অনেকেই এটি ব্যবহার করেন। শিশুরাও বাবা-মায়ের ফোন ব্যবহার দেখে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে স্মার্টফোনের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সন্তানের বয়স ০-৫ বছরের মাঝে শিশুদের একেবারেই স্মার্টফোন দেয়া উচিত নয়। তারা একবার ডিভাইসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়লে তা থেকে দূরে সরানো আরও কঠিন হয়ে পরে।

অনেক মা-বাবাই চাকুরী করেন এবং সারাদিন অন্যকারও কাছে সন্তান রেখে যেতে হয়। এক্ষেত্রে মা-বাবা ছাড়াও অন্যদের অসাবধানতায় শিশুরা স্মার্টফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পরে। একবার আসক্তি তৈরি হয়ে গেলে নিয়ন্ত্রন করা বেশি কঠিন।


স্মার্টফোনের নেতিবাচক প্রভাব

দৃষ্টিশক্তির সমস্যা – অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুর চোখের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
মনোযোগের ঘাটতি – একটানা মোবাইল ব্যবহারে শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যায়।
সামাজিক দক্ষতার অভাব – ভার্চুয়াল জগতে বেশি সময় কাটানোর ফলে বাস্তব জীবনের সামাজিকতা ও বন্ধুত্ব গড়তে সমস্যা হয়।
নিদ্রাহীনতা – রাতে ফোন ব্যবহারের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, যা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।


স্মার্টফোন আসক্তি দূর করার কার্যকর কৌশল

সন্তানকে স্মার্টফোনের আসক্তি থেকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে মা-বাবা কে সচেতন এবং কঠোরভাবে কিছু নিয়ম মেনে চলার আর কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে প্রথমেই তাদেরকে একেবারেই স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখতে হবে। যারা ভাবছেন এটা সম্ভব কিনা, তাদের জন্য বলছি, হ্যা এটা সম্ভব। আমরা অনেক প্যারেন্টসের সাথে কথা বলেছি, তারা সফল হয়েছেন তাদের সন্তানদের স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখতে। একেবারেই স্মার্টফোন না দিয়েও তাদের সন্তানদের তারা ব্যাস্ত রাখতে পেরেছেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজন শুধুই মা-বাবার ইচ্ছা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতা। আপনার এই একটি উদ্যোগ হতে পারে আপনার সন্তানের জন্য সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ। অন্তত পক্ষে সন্তানের বয়স ৫ হওয়ার আগে কোনভাবেই তাদের হাতে স্মার্ট ফোন দেয়া উচিত নয়।

স্মার্টফোন না দিয়ে আপনি আর কি কি করে সন্তানকে ব্যস্ত রাখতে পারেন তা শেয়ার করেছেন আপনার মতই অন্য অভিভাবকরা।

স্মার্টফোন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা
কিছু অভিভাবক একেবারেই মোবাইল দেন না এবং শিশুকে বোঝান যে এটি বড়দের জন্য। এতে শিশুদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের আগ্রহ কমে যায়।

শিশুকে ব্যস্ত রাখার বিকল্প ব্যবস্থা
কিছু অভিভাবক শিশুকে লেগো, পাজল, আর্ট-ক্রাফট, এবং শিক্ষামূলক খেলনা দেন। এটি তাদের মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে এবং মোবাইল থেকে দূরে রাখে।

গল্প পড়ে শোনানো ও বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা
বেশিরভাগ মা-বাবা বলেন, তারা তাদের সন্তানদের প্রচুর গল্প পড়ে শোনান। এতে শিশুদের কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তারা বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলে।

শিশুর সঙ্গে সময় কাটানো
অনেক বাবা-মা সন্তানের সঙ্গে খেলা করেন, ছড়া-গান শেখান, এবং পারিবারিক সময় কাটানোর অভ্যাস গড়ে তোলেন। এতে শিশুরা স্বাভাবিক বিনোদনে অভ্যস্ত হয় এবং মোবাইলের প্রতি আগ্রহ হারায়।

সামাজিক ও বাহ্যিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ
বাচ্চাদের বাইরে নিয়ে যাওয়া, পার্কে খেলতে নিয়ে যাওয়া বা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করানো তাদের স্মার্টফোনের আসক্তি কমাতে সাহায্য করে।

টিভির সময় নির্ধারণ করা
অনেক অভিভাবক টিভির জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেন, যেমন দিনে ৩০-৪৫ মিনিট। এটি শিশুকে প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে রক্ষা করে।

শিশুর সাহায্য নেওয়া ও দায়িত্ব দেওয়া
কিছু মা-বাবা বলেন, তারা সন্তানদের বাড়ির কাজের ছোট ছোট দায়িত্ব দেন। এতে শিশুরা ব্যস্ত থাকে এবং স্মার্টফোনের কথা মনে থাকে না।


স্মারর্টফোনের বিকল্প কি হতে পারে এবং তা কিভাবে দিবেন?

বয়স উপযোগী খেলনা এবং DIY কিটস – শিশুদের ব্যাস্ত রাখতে বেশি বেশি লার্নিং প্রোডাক্ট দিন। এমন কিছু খেলনার সেট কিনে দিন যা শিশুকে অনেক্ষন ব্যস্ত রাখবে। এবং একই খেলনা দিয়ে কয়েক ধরণের জিনিস করা যায় এমন কিছু কিনে দিন। স্মার্টফোন না দিয়ে থাকে এই জিনিসগুলো দিয়ে খেলতে দিন।

ক্রাফটিং এবং ড্রয়িং এর প্রতি মনযোগ দেয়া– ক্রাফটিং এবং ড্রয়িংয়ে সাধারনত একটু বেশি সময় দিতে হয়। তাই এই কাজগুলোতে শিশু অনেক্ষন ধরে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু ড্রয়িং বা ক্রাফটিং শেখানোর জন্য থাকে আবার মোবাইল ফোনের ভিডিও ছেড়ে দিবেন না। এরচেয়ে তাকে আপনি নিজেই কিছু শিখিয়ে দিন এবং তা কপি করার চেষ্টা করতে বলুন। সেট যেকোন কিছু হতে পারে। 

ফিজিকাল এক্টিভিটি এবং খেলাতে উৎসাহ দিন–  শিশুকে বেশি বেশি ফিজিকাল একটিভিটি যেমন দৌড়ানো, দোলনায় ওঠা, ফুটবল খেলা এই ধরণের খেলায় উৎসাহ দিন। ঘরের ভেতরেও তার জন্য ছোট করে খেলার পরিবেশ তৈরি করে দিন। পাশাপাশি আপনি নিজেও অংশ নিন। এবং এই খেলাগুলোর একটা স্কিল তাকে ভালো করতে উৎসাহ দিন, যা সে নিয়মিত প্র্যাক্টিস করতে পারবে। এতে সে ব্যাস্ত থাকবে। এবং স্কিল ডেভেলপ করলে তাকে রিওয়ার্ড দিন।

সন্তানের লার্নিং জার্নিকে আনন্দদায়ক ও প্যারেন্টসদের লাইফ সহজ করতে টগুমগু নিয়ে এলো লার্নিং বক্স সাবস্ক্রিপশন।

স্মার্টফোনের ইতিবাচক ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রিত রুটিন

৫ বছরের পর স্মার্টফোন একেবারে বাদ না দিয়ে সেটিকে নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। শিশুরা যদি স্মার্টফোন ব্যবহার করেই, তবে তা হতে হবে শিক্ষামূলক ভিডিও বা অ্যাপ ব্যবহারের জন্য, তবে সময় নির্ধারিত থাকতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রেও আসক্তি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সন্তানের হাতে স্মার্টফোন না দিয়ে আপনি পাশে থেকে তাকে ২০-৩০ মিনিট ব্যাবহার করতে দিতে পারেন এবং এক-সাথে কোন লার্নিং একটিভিটি করতে পারেন।


যেকোন মূল্যে সন্তানকে শর্ট ভিডিও যেমন রিলস, টিকটক বা ইউটিউব শর্টস থেকে সন্তানকে দূরে রাখুন।


শেষ কথা

সন্তানদের স্মার্টফোন আসক্তি থেকে দূরে রাখা কোনো কঠিন কাজ নয়, তবে এর জন্য বাবা-মায়ের সচেতনতা ও ধৈর্য প্রয়োজন। প্রযুক্তির ভালো দিকগুলো কাজে লাগিয়ে, শিশুদের সঠিক পথে পরিচালিত করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

ফেব্রুয়ারী মাসজুড়ে চলছে টগুমগু অনলাইন বইমেলা। শিশুর জন্য বই ও লার্নিং টয় কেনার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

 

ToguMogu App